সাধারণ জ্ঞান : কে কিসের জনক?

বিজ্ঞানের জনক কে?

গ্রীক বিজ্ঞানী থেলিস কে বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

ইতিহাসবিদগণের মতামত অনুসারে বিজ্ঞানী থেলিসের জন্ম হয়েছিলো ৬২৪ - ৬২৫ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে। জন্মস্থান মিলেটাস নামক অঞ্চলে যা এশিয়া মাইনর অঞ্চলের একটি অংশ ছিলো, বর্তমানে তুরস্কের বালাতা অঞ্চলে। ইতিহাসবিদের মতে, থেলিসের পিতামাতা ছিলেন প্রাচীন ফিনিশিয়া কলোনির অধিবাসী, পরে মিলেটাস অঞ্চলে আসেন (তার জন্মস্থান ও জন্মসাল নিয়ে মতান্তর রয়েছে যথেষ্ট)। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্টের মতে, তিনি ছিলেন খাটি মিলেশিয়ান নাগরিক। সেজন্য থেলিসের নামের শেষে যোগ করা হয়েছে "মিলেটাস" শব্দটি (থেলিস অফ মিলেটাস)। থেলিসের মৃত্যুর ও সঠিক সময় জানা সম্ভব হয় নি, তবে ধারণা করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৯ - ৫৮৬ সালের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।

থেলিস একজন ব্যবসায়িক ছিলেন ব্যবসা উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গা সফর করার সৌভাগ্য লাভ করেন ও ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। মিশরে ভ্রমণ করার সময় সেখানকার পুরোহিতদের কাছ থেকে তিনি জ্যামিতি শিখেন এবং থেলিসই প্রথম ব্যক্তি যিনি মিশরীয় জ্যামিতিবিদ্যা গ্রীসে নিয়ে আসেন। থেলিস ব্যবসায়িক জীবন অল্পকালের মধ্যেই ছেরে দেন, এবং দর্শন ও গণিত চর্চায় আত্মনিবেস করেন। এবং এতটাই আত্মমগ্ন ছিলেন যে, একদিন আকাশের তারকারাজির দিকে মনোযোগ অবস্থায় সান্ধ্যকালে ভ্রমন করতে গিয়ে গর্তে পরে যান এবং এক বৃদ্ধা দ্বারা তিরস্কৃত হন।
  • জেনোফেনিসের মতে, থেলিস ২৮ মে মাসের ৫৮৫ সালে সংঘটিত সূর্যগ্রহন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন-শীঘ্রই সূর্য রাত্রির মধ্যে ডুবে যাবে এবং চন্দ্র এসে সম্মুখে দাড়াবো। এবং তা পুরোপুরি ফলে যায় আর এ কারনেই তিনি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেন।
  • হিরোডাটাসের মতে, থেলিস একজন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ছিলেন যিনি অ্যাজিয়ান অঞ্চলের আইওনিয়ান নগররাষ্ট্র গুলো নিয়ে একটি ফেডারেশন গড়ে তোলার ব্যাপারে সালিশী করেছিলেন।
থেলিসকে গণিতশাস্ত্র, বিজ্ঞান ও দর্শনের জনক হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরন করা হয়। তার মাত্র দুটি উক্তি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে তারমধ্যে একটি হলো "সব কিছুর আদিমতম উপাদান হচ্ছে জল" এবং অন্যটি "সবকিছুই ঈশ্বরে পরিপূর্ণ"।

আধুনিক বিজ্ঞানের জনক কে?

রজার বেকন কে আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
রজার বেকন আনুমানিক ১২১৯/১২২০ সালে ইংল্যান্ডের সমারসেটের ইলচেস্টারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তার জন্ম তারিখের একমাত্র উৎস হল তার লেখা ১২৬৭ সালের "ওপাস তেরতিয়াম" এর একটি উদ্ধৃতির মাধ্যমে যেখানে তিনি উল্লেখ্য করেছেন "চল্লিশ বছর কেটে গেছে যখন আমি প্রথম বর্ণমালা শিখেছি"। আনুমানিক  ১২৯২ (৭২/৭৩ বছর বয়সে) মৃত্যুবরন করেন।

বেকন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, এবং ১২৩৭ বা পরবর্তী দশকের এক পর্যায়ে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। সেখানে থাকাকালীন সময় তিনি অ্যারিস্টোটালিয়ান যুক্তি, লাতিন ব্যাকরণ, জ্যোতির্বিদ্যা, পাটীগণিত জ্যামিতি, ও সংগীতের গাণিতিক দিকগুলির উপর শিক্ষাদান করেছেন। আলবার্টস ম্যাগনাস, রবার্ট কিলওয়ার্ডবি ও স্পেনের পিটার তার অনুষদের সহকর্মী ছিলেন। কর্নিশম্যান রিচার্ড রুফাস ছিলেন পণ্ডিত বিরোধী, যে কারনে ১২৪৭ সালে বা তার কিছু পরে প্যারিস ত্যাগ করেন রজার বেকন, আনুমানিক ১২৪৮ সালে তিনি সম্ভবত অক্সফোর্ডে ছিলেন সেখানে "আদম মার্সের" সাথে তার সাক্ষাৎ হয় এবং ১২৫১ সালের দিকে তিনি আবার প্যারিসে অবস্থান করেন।

রজার বেকন একজন মধ্যযুগীয় (১২১৪ - ১২৯৪) ইংরেজ দার্শনিক, তিনি অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকৃতির অধ্যয়নের উপর যথেষ্ট জোর দিয়েছিলেন। রজার বেকন আধুনিক পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের একজন পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি তার জাদুবিদ্যা ও স্বাধীন ইচ্ছাশূন্য সম্পর্কিত গল্পের জন্য বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন। তার জন্য তাকে প্রারম্ভিক আধুনিক যুগের একজন যাদুকর হিসাবে বিবেচিত। বিজ্ঞান ও যুক্তিতে "ফ্রান্সিস বেকন" যে নবযুগের সূচনা করেছেন, তার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে "তিনশ বছর" পূর্বে রজার বেকনের হাতে।

বেকনের অন্যতম প্রধান কাজ, ওপাস মাজুস যেটি রোমের পোপ চতুর্থ ক্লিমেন্ট -এর কাছে পাঠানো হয়েছিল ১২৬৭ সালে। "বারুদ বা গানপাউডার" চীনে আবিষ্কৃার হলেও ইউরোপে প্রথম এর ফরমূলা বা সূত্র রেকর্ড করেছিল রজার বেকন।

হিসাব বিজ্ঞানের জনক কে?

লুকা প্যাসিওলি কে হিসাব বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
লুকা প্যাসিওলি ১৪৪৭ সালে সানসিপলক্রোতে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলে গতানুগতিক শিক্ষা গ্রহণের বদলে ব্যবসা শিক্ষায় বাধ্য হন লুকা প্যাসিওলি। যৌবনের শুরুতে গণিতের শিক্ষক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করতেন কিন্তু একসময় গণিতের শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন এবং তার প্রথম বই "Summa De Arithmetica Geometria Proportionate Proportionalita" প্রকাশ করেন ১৪৯৪ সালে। তার এই বইটি প্রকাশের পর লুকা প্যাসিওলি ইতালির মিলান শহরের "ডিউকের" কাছ থেকে "মিলানে" গিয়ে তার সাথে কাজ করার সুজোগ পান। সেখানেই তিনি "লেওনার্দো দা ভিঞ্চি" এর সাথে পরিচিত হন, এবং তাকে গণিত পড়ানো শুরু করেন।

লুকা প্যাসিওলি ছিলেন একজন ইতালীয় গণিতবিদ, তিনি গণিত শিক্ষক ছিলেন এবং হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। লুকা প্যাসিওলিকে "হিসাববিজ্ঞান ও হিসাবরক্ষণের পিতা" বলা হয়, তিনিই ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি যে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে সর্বপ্রথম গবেষণাকর্ম প্রকাশ করেন।

পদার্থ বিজ্ঞানের জনক কে?

পদার্থ বিজ্ঞানের "জনক" পদবীটি কোনো একক ব্যক্তির নয় (স্যার আইজ্যাক নিউটন, আলবার্ট আইনস্টাইন ও গ্যালিলিও) এদেরকে সম্মিলিত ভাবে পদার্থ বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তবে, এদের মধ্যে "আলবার্ট আইনস্টাইনকে" আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জনক কে?

আলবার্ট আইনস্টাইন কে আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

সমাজ বিজ্ঞানের জনক কে?

সমাজ বিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁৎ।
অগাস্ট কোঁৎ ফ্রান্সের মন্টপেলিয়ারে ১৯ জানুয়ারি ১৭৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৫ সেপ্টেম্বর ১৮৫৭ (বয়স ৫৯) সালে মৃত্যুবরন করেন। অগাস্ট কোঁৎ "কারোলিন মাসাঁ" নামক এক নারীকে বিয়ে করেন ১৮২৫ সালে এবং তাদের ১৮৪২ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

অগাস্ট কোঁৎ ১৯শ শতকের একজন ফরাসি লেখক ও চিন্তাবিদ ছিলেন, যাকে সমাজ বিজ্ঞানের জনক হিসেবে গন্য করা হয়। এমনকি তিনিই প্রথম সমাজ বিজ্ঞানকে নির্দেশ করতে ফরাসি "সোসিওলোজি" শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। অগাস্ট কোঁৎ সমাজ বিজ্ঞানে প্রথম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করায় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি মনে করতেন যে, প্রাকৃতিক ঘটনাগুলির মতোই সামাজিক প্রপঞ্চগুলিকে বিভিন্ন সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। অগাস্ট কোঁৎ দৃষ্টবাদ (পজিটিভিজম) নামক দর্শনের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ফরাসি দার্শনিক অঁরি দ্য সাঁ-সিমোঁ-র শিষ্য ছিলেন অগাস্ট কোঁৎ। তার কাজ জন স্টুয়ার্ট মিল, কার্ল মার্ক্স, এমিল দ্যুর্কেম, জর্জ ইলিয়ট, হার্বার্ট স্পেনসার, এডওয়ার্ড বার্নেট টেইলরসহ অনেক সমাজ চিন্তাবিদকে উদ্বুদ্ধ করেছে, এছাড়াও তিনিই প্রথম ক্রিয়াবাদের ধারনা দেন। অগাস্ট কোঁৎ ১৮৩২ - ১৮৪২ সাল পর্যান্ত ফ্রান্সের প্যারিসে মর্যাদাবাহী "একল পোলিতেকনিক বিদ্যালয়ে" পাঠদান করেন।

অগাস্ট কোঁৎ -এর রচিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলি হল ১৮৩০ - ১৮৪২ সালের মধ্যে ৬ খণ্ডে প্রকাশিত "কুর দ্য ফিলোজোফি পোজিতিভ" (দৃষ্টবাদী দর্শনের পাঠ) ও ১৮৫১ - ১৮৫৪ সালের মধ্যে ৪ খণ্ডে প্রকাশিত "সিস্তেম দ্য পোলিতিক পোজিতিভ" (দৃষ্টবাদী রাজনীতি ব্যবস্থা)।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জনক কে?

থিওফ্রাস্টাস কে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। কিন্তু ভারতীয় উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জনক হিসেবে "উইলিয়াম রক্সবার্গ" পরিচিত।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জনক থিওফ্রাস্টাস আনুমানিক ৩৭১ খ্রিষ্টপূর্ব জন্মগ্রহন করেন এবং আনুমানিক ২৮৭ খ্রিষ্টপূর্ব মৃত্যুবরন করেন। থিওফ্রাস্টাস ছিলেন ইরেসোস হতে আগত একজন গ্রিক দার্শনিক।থিওফ্রাস্টাসের মূল নাম টাইর্টামাস তবে, তাকে "ঐশ্বরিক বর্ণনাকারী" নামে ডাকা হতো, এই নাম থিওফ্রাস্টাসের শিক্ষক "এরিস্টটল" তার অসাধারণ বিবৃতিমূলক দক্ষতার জন্য দিয়েছিলেন। থিওফ্রাস্টাস "পেরিপ্যাটেটিক" ধারায় এরিস্টটলের উত্তরাধিকারী হিসাবে পরিচিত।

জীব বিজ্ঞানের জনক কে?

এরিস্টটল

রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক কে?

এরিস্টটল

প্রাণী বিজ্ঞানের জনক কে?

এরিস্টটল
এরিস্টটল জন্মগ্রহণ করেন ৩৮৪ খ্রিষ্টপূর্ব থারেস উপকূলবর্তী স্টাগিরাস নামক এক গ্রিক উপনিবেশে। "ম্যাসিডোনিয়ার" রাজা "আমিন্টাসের" রাজসভায় গৃহচিকিৎসক ছিলেন এরিস্টটলের পিতা নিকোম্যাকাস। তার এই চিকিৎসা ব্যবসায়ই ছিল তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়। পিতার প্রেরনায় এরিস্টটল ডাক্তার হবার চেষ্টা করেন এবং জীবনের শুরু থেকেই "মেসিডোনিয়ার" রাজসভার সাথে সম্পর্ক থাকায় তার ভবিষ্যৎকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেন।

শৈশবেই এরিস্টটলের পিতা মারা যান এবং ১৭ বছর বয়সে তাকে এথেন্সে জ্ঞানার্জনে পাঠিয়ে দেন তার অভিভাবক প্রোক্সেনাস। তখন বিশ্বে জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হত এথেন্সকে। সেখানে এরিস্টটল সরাসরি প্লেটোর অধীনে "প্লেটোর" একাডেমিতে প্রায় বিশ বছর শিক্ষা গ্রহণ করেন। প্লেটোর একাডেমিতে থাকাকালেই একসময় তিনি নিজেই "ভাষাতত্ত্ব" নিয়ে লেকচার দিতে শুরু করেন। ৩৪৭ খ্রিষ্টপূর্ব প্লেটোর মৃত্যুর পর এরিস্টটল একাডেমির প্রধান হবার যোগ্য ছিলেন, কিন্তু প্লেটোর আত্মীয় "স্পিউসিপ্পাসকে" একাডেমির প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। "অ্যাটারনিয়াস" এর শাসক "হারমিয়াসের" আমন্ত্রণে এরিস্টটল সেখানে যান। এরিস্টটল সেখানে ৩ বছর থাকেন এবং রাজার ভগ্নি "পিথিয়াসকে" বিয়ে করেন, পরবর্তীতে তিনি আরো একজন নারী "হারপিলিসকে" বিয়ে করেন ও তাদের এক ছেলে সন্তান জন্ম হয় এবং তার রাখেন "নিকোম্যাকাস"। ৩ বছর সেখানে থাকার পর "অ্যাটারনিয়াস" পারস্য সম্রাট দখল করে নেয় তখন এরিস্টটল মাইটিলেনি চলে যান। পরবর্তী ৫ বছর এরিস্টটল "মেসিডোনিয়ার" রাজা "ফিলিপের" ১৩ বছরের ছেলে "আলেকজান্ডারের" শিক্ষকতা করেন। রাজা ফিলিপ ও আলেকজান্ডার দুজনেই এরিস্টটলকে পরম শ্রদ্ধা করতেন।

"ফিলিপের" মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার রাজ্যেভার গ্রহণ করেন এবং এরিস্টটল "এথেন্স" ফিরে যান। প্লেটোর মৃত্যুর পর এরিস্টটল প্রথম "এথেন্স" আসেন এখানে এসে তিনি দেখলেন প্লেটোর একাডেমিতে "প্লেটোনিজমের" ব্যাপক প্রসার ঘটেছে ও প্লেটোনিজম এথেন্সের প্রধান দর্শন। যে কারনে তিনি লাইসিয়াম নামক এলাকায় নিজের স্কুল স্বস্থাপন করেন। পরের ১৩ বছর তিনি শিক্ষকতা ও দর্শন প্রচার করে কাটান। এরিস্টটল রাতে "এথেন্সের" সাধারণ জ্ঞানপিপাসু জনগণের জন্য ও দিনে তার ঘনিষ্ঠ ছাত্রদের জন্য লেকচার দিতেন। ৩২৩ খ্রিষ্টপূর্ব আলেকজান্ডারের অকাল মৃত্যুতে "এথেন্সের" মেসিডোনিয়ার পূর্ব সরকারকে উৎখাত করা হয়, সে সময় এরিস্টটলের উপর ধর্মীয় বিশ্বাসহানিতার অভিযোগ দেয়া হয়। এরিস্টটল শাস্তি থেকে রক্ষা পাবার জন্য, দ্রুত সেখান থেকে ইউবোয়ার ক্যালসিসে চলে যান। তিনি ভয় করছিলেন যেন তার অবস্থাও "প্লেটোর" শিক্ষক সক্রেটিসের মতো না হয়। ক্যালসিসে প্রথম বছরই তিনি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩২২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে (৬৩ বছর বয়সে) এরিস্টটল মৃত্যুবরন করেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক কে?

গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞান হল রোগ উপশমের বিজ্ঞান শৈলী বা কলা। মানব স্বাস্থ্য বা মানব শরীর ভালো রাখার উদ্দেশ্যে রোগ প্রতিষেধক ও রোগ নিরাময় বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এবং অধ্যায়ন করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গৱেষণা, অধ্যয়ন এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বিদ্যার ব্যবহার করে শল্য বা ঔষধ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিরাময় করার চেষ্টা করা হয়।শল্য বা ঔষধ চিকিৎসা ছাড়াও কৃত্রিম অঙ্গ সংস্থাপন, মনোচিকিৎসা, আণবিক রশ্মির প্রয়োগ, জৈবিক সামগ্রি (রক্ত, অণু জীব ইত্যাদি), শক্তির অন্যান্য উৎস (বিদ্যুৎ, চুম্বক, অতি-শব্দ ইত্যাদি), বিভিন্ন বাহ্যিক উপায় (যেমন, স্প্লিণ্ট এবং ট্রাকশন) ইত্যাদির ও প্রয়োগ করা হয়।

হিপোক্রেটিস ৪৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কস, প্রাচীন গ্রিসে জন্মগ্রহন করেন এবং ৩৭০ খ্রিষ্টপূর্ব লারিসা, প্রাচীন গ্রিসে মৃত্যুবরন করেন। যিনি পেরিক্লেসের যুগের একজন প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক ছিলেন, যাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলে গন্য করা হয়। হিপোক্রেটিস চিকিৎসাশৈলীর উদ্ভাবনের স্বীকৃতিতে তাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের পিতা বলে অভিহিত করা হয়। হিপোক্রেটিসের ধর্মীয় রীতিনীতি ও শৈলী দর্শন থেকে পৃথক করে চিকিৎসাশাস্ত্রকে একটি পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসাশাস্ত্রে বিপুল পরিবর্তন আনে।

হিপোক্রেটিসকে প্রথম ব্যক্তি যিনি বিশ্বাস করতেন যে, ঈশ্বর বা কুসংস্কার থেকে নয়, বরং প্রাকৃতিক উপায়ে রোগের প্রকোপ ঘটে। পিথাগোরাসের শিষ্যদের মতে, হিপোক্রেটিস চিকিৎসা ও দর্শনশাস্ত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেন কিন্তু তিনি ধর্ম হতে চিকিৎসাবিদ্যাকে পৃথক করে ও মতপ্রকাশ করেন যে, রোগ দেবতার দ্বারা ঘটে না বরং, জীবন-যাপন পদ্ধতি, খাদ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের দ্বারা হয়ে থাকে। এমন কি কর্পাস হিপোক্রেটিকামে কোথাও রহস্যজনক অসুস্থতার উল্লেখ করা হয়নি। প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসাপদ্ধতি কস ও নিডোস এই দুই অঞ্চলের প্রচলিত পদ্ধতিতে বিভক্ত ছিল।

হিপোক্রেটীয় চিকিৎসাপদ্ধতি একটি নিষ্ক্রিয় ও নিরীহ পদ্ধতি বিশেষ, প্রকৃতির নিরাময় শক্তির ওপর এই চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ভর করত। এই তত্ত্বানুসারে, ৪টি ধাতুর ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষমতা শরীরের রয়েছে যা নিরাময়ের জন্য দরকার। যে কারণে এই চিকিৎসাপদ্ধতি প্রাকৃতিক উপায়ে আরও সহজ করার দিকে মনোযোগ দেন।

রোগীকে শরীরের বিশ্রাম ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি। হিপোক্রেটীয় পদ্ধতি সাধারণভাবে রোগীদের কোনো কষ্ট দিত না, যেমন: মদ বা বিশুদ্ধ জল দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করা হত এবং কখনো কখনো আরামদায়ক মলমও লাগানো হতো।

Next Post


Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous August 10, 2023 at 3:39 PM

    ধন্যবাদ

Add Comment
comment url