ব্রি ধান ৯৫ চাষ পদ্ধতি ও বৈশিষ্ট্য
ব্রি ধান ৯৫ রোপা আমন মৌসুমের জাত। ব্রি ধান ৯৫ এর জীবনকাল ১২৫ দিন। উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় এ ধান ভারতীয় স্বর্ণা ধানের পরিবর্তে চাষাবাদ করা হয়। এই জাতের গড় ফলন বিঘাপ্রতি ১৯ মণ বা ৫.৭ টন (প্রতি হেক্টর)। অনুকূল পরিবেশ ও উপযুক্ত পরিচর্যায় পেলে বিঘা প্রতি ২৩ মণ বা ৬.৫৫ টন (প্রতি হেক্টর) পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
ব্রি ধান ৯৫ এর বৈশিষ্ট্য
- এই জাতের পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছের গড় উচ্চতা ১২০ সে.মি.।
- বৃদ্ধির সময় গাছের আকার ও আকৃতি প্রায় ব্রি ৪৯ জাতের ধানের মতো।
- পাতার রং গাঢ় সবুজ এবং ডিগপাতা খাড়া
- ধানের দানার রং গাঢ় লাল।
- চালের রং সাদা এবং সাইজ মাঝারি মোটা।
- চালে অ্যামাইলোজ ২৮.০% এবং প্রোটিন ৮.০%।
- ১০০০ টি পরিপক্ক ধানের ওজন প্রায় ২১.৫০ গ্রাম।
ব্রি ধান ৯৫ চাষ পদ্ধতি
এই জাতের ধান রোপা আমন মৌসুমে বৃষ্টি নির্ভর চাষাবাদ উপযোগী। এই ধানের চাষ পদ্ধতি অন্যান্য উচ্চফলনশীল রোপা আমন জাতের মতই।
- বীজতলায় বীজ বপন: ২৫ জুন থেকে ২৫ জুলাই (১১ আষাঢ় থেকে ১০ শ্রাবণ)।
- চারার বয়স: ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রোপন করতে হবে।
- চারার সংখ্যা: গোছা প্রতি ২ থেকে ৩টি করে রোপন করবেন।
- রোপণ দূরত্ব: ২০ সে.মি. × ১৫ সে.মি. দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
- আগাছা দমন: ধানের চারা রোপন করার পর ৩০ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত জমির আগাছা বা জঙ্গল মুক্ত রাখতে হবে।
- সার ব্যবস্থাপনা: সারের মাত্রা অন্যান্য রোপা আমন উফশী জাতের মতই।
- ইউরিয়া ২৪ কেজি, ডিএপি বা টিএসপি ৮ কেজি, এমওপি ১৪ কেজি ও জিপসাম ৯ কেজি (প্রতি বিঘা)।
- জমি তৈরি করার শেষচাষে সমস্ত ডিএপি বা টিএসপি, জিপসাম ও এমওপি প্রয়োগ করতে হবে।
- ইউরিয়া তিন কিস্তিতে সমান তিন ভাগ প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রথম কিস্তি চারা রোপণের ৭ থেকে ১০ দিন পরে, দ্বিতীয় কিস্তি চারা রোপণের ২৫ থেকে ৩০ দিন পরে এবং তৃতীয় কিস্তি গাল থেকে থোড় আসার ৫ থেকে ৭ দিন আগে।
- ডিএপি সার প্রয়োগ করলে প্রতি কেজিতে ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া কম ব্যবহার করলেই হবে (সবেক্ষেত্রেই)।
- রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমন: ব্রি ধান ৯৫ এ রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেক কম হয়। তবে রোগবালাই বা পোকা মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে অনুমোদিত বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
- সেচ ব্যবস্থাপনা: রোপনের পর থেকে ধানে দুধ আসা পর্যন্ত জমিতে যথেষ্ট পরিমানে রস থাকা প্রয়োজন। এ সময়ের মধ্যে খরা দেখা দিলে সেচ দিতে হবে।
- ফসল কাটা: ০১ নভেম্বর থেকে ০১ ডিসেম্বর (১৫ কার্তিক থেকে ১৫ অগ্রহায়ণ)। (শীষের ৮০ ভাগ ধান পরিপক্ক এবং অবশিষ্ট ২০ ভাগ ধান অর্ধ-পরিপক্ক হলে দেরী না করে ধান কেটে ফেলা উচিত)।