ব্রি ধান ৮১ এর বৈশিষ্ট্য ও চাষ পদ্ধতি

ব্রি ধান ৮১ এর বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক ২০১৭ সালের অনুমোদন প্রাপ্ত আধুনিক উচ্চফলনশীল "ব্রি ধান ৮১" বোরো মৌসুমের একটি জাত। এই জাতটি সেচ নির্ভর জমিতে চাষাবাদ করতে পারবেন। ব্রি ধান ৮১ এর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন। জাতটি গড়ে ৬.০ থেকে ৬.৫ টন/ হেক্টর পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা এবং অনুকুল পরিবেশে চাষাবাদ করলে সর্বোচ্চ ০৮ টন/ হেক্টর ফলন দিতে পারে। উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ব্রি ধান ৮১ জাতটি সুগন্ধ ছাড়া "প্রিমিয়াম কোয়ালিটি" ধানের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। চালের আকার-আকৃতি বাসমতি চালের মতই লম্বা ও চিকন হওয়ায় বিদেশে রপ্তানীযোগ্য।

ব্রি ধান ৮১ এর বৈশিষ্ট্য:

  1. পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছের গড় উচ্চতা একশ (১০০) সে:মি:।
  2. ব্রি ধান ২৮ এর চেয়ে ব্রি ধান ৮১ এর গাছের কান্ড বেশি শক্ত হয়।
  3. ব্রি ধান ৮১ জাতের ডিগ পাতা বা মাঝের পাতা সামান্য হেলানো থাকে।
  4. অঙ্কুর অবস্থায় গাছের আকার-আকৃতি আনেকটা ব্রি ধান ২৮ এর মত, কিন্তু গাছের পাতা কিছুটা মোটা থাকে।
  5. ব্রি ধান ৮১ পাকা ধানের রং দেখতে খড়ের মত হয়।
  6. ধানের অগ্রভাগ সামান্য বাঁকানো থাকে এবং আকৃতি লম্বা ও চিকন।
  7. ১০০০ টি পুষ্ট ধানের গড় ওজন প্রায় বিশ দশমিক তিন (২০.৩) গ্রাম হয়।
  8. ব্রি ধান ৮১ এর চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ছাব্বিশ দশমিক পাঁচ শতাংশ (২৬.৫%)।
  9. ব্রি ধান ৮১ এর চালে প্রোটিনের পরিমাণ দশ দশমিক তিন শতাংশ ১০.৩%।
  10. মোটকথা: আধুনিক উফশী ধান এর সকল বৈশিষ্ট্যই ব্রি ধান ৮১ তে বিদ্যমান।

ব্রি ধান ৮১ চাষ পদ্ধতি:

  1. বীজ তলায় বীজ বপণ: ০১ই অগ্রহায়ণ - ১৫ই অগ্রহায়ণ (১৫ই নভেম্বর - ৩০ই নভেম্বর) এর মধ্যে বীজ তলায় বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।
  2. চাষের উপযোগী জমি: মাঝারি উঁচু থেকে উঁচু জমিতে এই ধান চাষ করার জন্য উপযুক্ত, তবে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে নীচু জমিতেও চাষ করা যেতে পারে।
  3. চারার বয়স: ৩৫ - ৪০ দিন বয়সি চারা রোপন করতে হবে।
  4. চারার সংখ্যা: প্রতি গুছিতে ৩টি করে।
  5. রোপন দূরত্ব: ২৫ × ১৫ সে.মি.।
  6. সার প্রয়োগ বিঘা প্রতি:
    • ইউরিয়া- ৩০ কেজি, টিএসপি ১৩ কেজি, এমওপি ২০ কেজি, জিপসাম ১৫ কেজি এবং দস্তা ১.৫ কেজি বিঘা প্রতি।
    • জমি প্রস্তুতের সর্বশেষ চাষের সময় অর্ধেক এমওপি, সবটুকু টিএসপি, জিপসাম এবং জিংক সালফেট জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
    • ইউরিয়া তিন কিস্তিতে ভাগ করে দিতে হবে যেমন: ১ম কিস্তিতে ৫০%, ২য় কিস্তিতে ৩০% এবং শেষ কিস্তিতে ২০%।
    • ১ম কিস্তি চারা রোপনের ১০ থেকে ১৫ দিন পর দিতে হবে, ২য় কিস্তি ২৫ থেকে ৩০ দিন পর এবং শেষ কিস্তি ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর উপরি প্রয়োগ করে দিতে হবে।
    • বাকী অর্ধেক এমওপি সার ইউরিয়ার শেষ কিস্তির সাথে প্রয়োগ করতে হবে।
  7. আগাছা দমন: চারা রোপণের পর থেকে ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
  8. সেচ ব্যবহার: প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে।
  9. রোগবালাই বা পোকামাকড় দমন: এই জাতের রোগের আক্রমণ অনেক কম হয়। তবে, রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে সাথে সাথে অনুমোদিত বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
  10. ফসল কাটা: ২৫ই চৈত্র থেকে ০৫ই বৈশাখ (০৮ই এপ্রিল - ১৮ই এপ্রিল) পর্যন্ত ধান কাটার উপযুক্ত সময়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
Advertisement