শীতের সকাল রচনা
শীতের সকাল রচনা
ভূমিকা: বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। শীতকাল হলো ছয়টি ঋতুর মধ্যে পঞ্চম। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। জ্বরাগ্রস্ত জীবনের বার্তা নিয়ে এসে প্রকৃতির বক্ষ দখল করে। ফসলহীন মাঠ, পাতাবিহীন গাছ -প্রকৃতিতে যেন রিক্ততা ছেয়ে গেছে বলে মনে হয়। তখন প্রকৃতিকে বৈরাগীর ন্যায় উদাসী এক বাউল মনে হয়। শীত শুধু মানুষের মনে রিক্ততা বোয়ে আনেনা, তার সাথে আনন্দ নিয়ে আসে। শীতকালে পিঠা পুলি উৎসব হয়। এছাড়া গ্রামে নানা ধরনের মেলা হয়। শীতের এই উৎসবে মানুষের মনের নিরানন্দের ডাকনা সরিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে।
শীতের সকালের আগমন: বসন্তের আগে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আগমন ঘটে শীতের।শীতের সকালে লেপের নিচ থেকে বের হতে ইচ্ছে করেনা । সকাল হয়েছে কিনা বোঝা যায় না, কিন্তু পাখির কিচিরমিচির শব্দ বুঝিয়ে দেয় সকালের বার্তা। কুয়াশার চাদর ভেদ করে ফুটে ওঠে সূর্যের কিরণ, প্রভাতের বার্তা বহন করে নিয়ে আসে। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে কৃষকেরা গরু নিয়ে মাঠে যায়।
শীতের সকালের বর্ণনা: দিগন্ত বিস্তৃত সাদা চাদর দিয়ে যেন ঢাকা থাকে শীতের পৃথিবী। হটাৎ করে কুয়াশার বুক ভেদ করে পূর্ব দিগন্তে ঝলমল করে ওঠে সূর্যের কিরণ। কিন্তু প্রচন্ড শীতের কারণে মানুষ তখনো লেপের নিচে। পশু-পাখিরা দেরি করে নীড় ত্যাগ করে। শীতের সকালের রুপালী আলোতে ঘাসের উপর জমে থাকা নিশির মুক্তোর মতো চিকচিক করে ওঠে। শীতের সকালে বাগান আলো করে ফুটে থাকে নানা রকমের ফুল। যেমন পলাশ, নীলমণি, গাঁদা, কলাবতি, চন্দ্রমল্লিকা, জিনিয়া্ , ডালিয়া ইত্যাদি। এই ফুলগুলো শীতের সকালকে আনন্দের সাথে স্বাগত জানায়। শীতের সকালে খেজুরে রস পাওয়া যায়্। শীতের সকালে বাটালী গুড়ের পায়েশ, চালের পিঠা ,রুটি খাওয়া ধূম পরে। শীতের সকালে সবাই রোদে বসে নাস্তা করে।
প্রকৃতি ও জীবজগতের বৈচিত্র: শীতের সকালে মানুষ ও পশু-পাখির মধ্যে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়। শীতের সময় রাত্রি বড় আর দিন ছোট হতে থাকে। নর ও নারীরা প্রচন্ড শীতের মধ্যে অপেক্ষা করতে থাকেন, কখন সকাল হবে। আর সকালের সূর্য ওঠার সাথে সাথে চাঙ্গা হয়ে ওঠে প্রকৃতি ও জগৎ। সকল মানুষের কর্ম জীবন নিয়ে ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। কৃষকেরা শীতের সকালে ধান কাটতে মাঠে যায়, রাখালেরা গরু চরাতে যায়।অন্য দিকে কৃষাণীরা ধান ভানার মহাউৎসবে মেতে উঠে।
শীতের সকালে গ্রামের অবস্থা : শীতের সকালের তাৎপর্য সত্যিকার অর্থে একমাত্র গ্রামেই বোঝা যায়। শীতের সকালে গ্রামের প্রকৃতি এক মনোরম রুপ ধারণ করে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক অপূর্ব দৃশ্য। চারি দিকে ধানের খেত, আর ধান গাছের উপর শিশি ঝাড়ে পরতে দেখতে কত সুন্দর লাগে। গ্রামের বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের রৌদ্রের পরশে হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। শুনতে পাওয়া যায় পাখিদের কোলাহলে, আর খেতে সরিষার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। গ্রামের বাড়িতে খেজুর গাছে গাছে রসের হাঁড়ি ঝুলতে দেখা যায়। আর রসের হাঁড়ি থেকে বাতাসে মিষ্টি গন্ধ ছড়া্য়। কিন্তু প্রচন্ড শীতে থেমে থাকে না খেজুরে ঠান্ডা রস খাওয়া । শীতকালে গ্রামের বাড়িতে নানা রকমের পিঠা তৈরি হয়।
শীতের সকালে শহরের অবস্থা: শীতের সকাল গ্রামের জীবন থেকে একদম ভিন্ন হয় শহরের জীবন। শহরে শীত অনেক কম পড়ে। কারণ বড় বড় অট্টালিকা ভেদ করে শীতল বাতাস আসতে পারে না। শহরে গাছপালা কম থাকার কারণে আবহাওয়া গরম থাকে। আর শীতের ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হলেও খেজুরে রসের বা নলেন গুরের মন মাতানো গন্ধ পাওয়া যায় না। আর শহরের বাতাসের সাথে পাওয়া যায় নোংরা গন্ধ, গাড়ির পেট্রোল-ডিজেলের গন্ধ। শহরের সকল মানুষ যান্ত্রিক সভ্যতায় অভ্যস্ত। তারা প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে ভুলে গেছেন। কিন্তু শহরের মানুষ আবার ভালোবাসে নানা রঙে অথবা নানা রূপে সাজাতে। শীতের সময় শহরে খেলাধুলায় মেতে থাকে্। শহরের মানুষ বনভোজনের জন্য ছুটে চলে এক শহর থেকে অন্য শহরে। তাদের শহর জুরে চলে ঘোরাফেরা,আর একই সাথে খাওয়া দাওয়া।
শীতের সকালে খাবার দাবার: শীতের সকালে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। গাঁয়ে নানা রকমের পিঠা তৈরি করা হয়। বিশেষ করে দুধ পুলি , ভাপা পিঠা ,পাটিসাপটা, ভাপাপুলি, চিতই পিঠা আরো কত কি। শীতের সকালে খেজুরের রসে তৈরি পয়েস বাঙালিকে রসময় করে তোলে । তাছারা শীতে চাষ হয় নানা ধরনের সবজি। যেমন কপি, টমেটো, গাজর, মূলা, আলু, বরবটি, রসুন, পালাংশাক, পেঁয়াজ্ ইত্যাদি। শীতের সকালে কুয়াশায় ভেজা বরই কুড়িয়ে খাওয়ার মজাতো আছেই পুকুরে,খালে,বিলে এই সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। শীতের সকালটাকে আরো সুন্দর করে তোলো বাগানে ফুটে থাকা ফুল।
শীতের উৎসব: শীতকালে ঝড়বৃষ্টি হওয়ার আশাঙ্কা থাকে না। তাই এই সময়কে ভ্রমণ বা বিনোদনের জন্য বেছে নেওয়া হয়। এই সময়ের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো নবান্ন উৎসব, এছাড়া আরো আছে পৌষমেলা ও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে মুখরিত হয়ে থাকে দেশটি।
শীতের অসুবিধা: শীতের সকালে অনেক আনন্দের মাঝেও কিছু বিষণ্নতার চিত্র ফুটে ওঠে। প্রচন্ড শীতে গরীব মানুষের অনেক কষ্ট হয়। কারণ শীতে তাদের পরার মতো গরম কপাড় নেই। গরীব মানুষের হাড় কাঁপানো শীতের মাঝে কষ্টের সীমা থাকে না্। শুধু অপেক্ষা থাকা কখন পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা যাবে। কারণ এই সময় দুই তিন দিন পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলে না। তখন শীতে কুঁকড়ে যায় মানুষগুলো। খড় বা শুকনো পাতা জ্বালিয়ে আগুনের তাপ নেয়।
উপসংহার: শীতের আগমনে প্রকৃতিতে নিয়ে আসে ভিন্ন স্বাদ। শীতের সকালে চারিদিক কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আর যখন কুয়াশার জাল ভেদ করে সূর্য রশ্মি ওঠে তখন যেন মনে হয় স্বর্গপুরী। শীতের সময় প্রকৃতি যেন রিক্ততা ছেয়ে যায়।এ সময় পাকা ফসল যেন সবাইকে নিমন্ত্রণ দেয়। হেমন্তের শেষের সময় উতর দিক থেকে হালকা হালকা বাতাস এসে শীতের আগমনের র্বাতা দেয়।