জীবন বৃত্তান্ত লেখার নিয়ম বাংলা এবং জীবন বৃত্তান্ত ফরম
জীবন বৃত্তান্ত
জীবন বৃত্তান্ত (CV) বলতে মূলত নিজের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন বা বিবরণকে বুঝায়। জীবন বৃত্তান্তকে ইংরেজি পরিভাষায় "কারিকুলাম ভিটা" (curriculum vitae) এবং মার্কিন ইংরেজি পরিভাষায় "রেজ্যুমে" (résumé) বলে।
জীবন বৃত্তান্ত আমরা সাধারনত চাকরি পাবার আশায় তৈরি করে থাকি। কারণ জীবন বৃত্তান্ত চাকুরীদাতার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার প্রাথমিক মাধ্যম৷ এতে একজন ব্যাক্তির পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত যোগ্যতা এবং পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ বা বর্ণনা সম্বলিত একটি নথিকে বোঝায়, যা সাধারণত চাকরির আবেদনের সাথে জমা দিতে হয়। আপনি চাইলে এতে শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত আরো কিছু তথ্য যোগ করতে পারেন যেমন নিজের আগ্রহ, শখ, পছন্দ-অপছন্দ, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, কম্পিউটার দক্ষতা, ইত্যাদি। যা চাকুরীদাতার কাছে আপনি নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় চাকুরীপ্রার্থীরা নিজের জীবন বৃত্তান্ত লেখার নিয়মের ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেন না, ফলে অনেক যোগ্য ব্যাক্তি চাকরীর সাক্ষাৎকারের (Job Interview) জন্য ডাক পান না এবং নিজের যোগ্যতা প্রমান করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন৷
জীবন বৃত্তান্ত লেখার নিয়ম বাংলায়
জীবন বৃত্তান্ত বা বায়োডাটা লেখার নিয়মে সবার আগে যে সকল বিষয় গুলো মাথায় রাখতে হবে তা হল:
- একজন চাকুরীদাতা গড়ে ৩০ সেকেন্ড সময় ব্যায় করেন একটি জীবন বৃত্তান্তের উপর, যে কারণে সংক্ষিপ্ত ও সুস্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করবেন।
- অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বা অপ্রয়োজনীয় তথ্য ব্যবহার করবেন না৷
- সদ্য পাস করা বা পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা নেই এমন প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত কোনভাবেই এক থেকে দুই পাতার বেশি হওয়া উচিত নয়৷
- জীবন বৃত্তান্ত খুবি আকর্ষণীয় হতে হবে, তবে রঙিন কালি বা রঙিন কাগজ ব্যবহার করবেন না।
- কোন কিছু "হাইলাইট" করতে হলে তা বোল্ড, ইটালিক বা আন্ডারলাইন করবেন৷
- বানান ও ব্যাকরণগত ভুল করবেন না কারণ চাকুরীদাতার মনে আপনার সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে৷
- যদি নির্দিষ্ট কোনো চাকুরীর জন্য আবেদন করেন সে ক্ষেত্রে আপনার "জীবন বৃত্তান্ত" চাকুরীর চাহিদা অনুযায়ী তৈরী করবেন৷
- জীবন বৃত্তান্তে এমন কোনো তথ্য দিবেন না, যা আপনার সাক্ষাৎকারের সময় আপনাকে ভুল প্রমানিত করতে পারে৷
জীবন বৃত্তান্ত লেখার নিয়ম বাংলা
বাংলা জীবন বৃত্তান্ত লেখার নিয়ম নিচে তুলে ধরা হল:
- শিরোনাম
- সার সংক্ষেপ
- ক্যারিয়ার উদ্দেশ্য
- চাকুরির অভিজ্ঞতা
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- অতিরিক্ত তথ্য
- ব্যক্তিগত তথ্য ও
- রেফারেন্স
শিরোনাম:
জীবন বৃত্তান্তের শুরুতেই আপনার পুরো নাম "বোল্ড" করে একটু বড় "ফন্টে" লিখবেন (ডাক নাম ব্যবহার করবেন না)৷ এরপরে আপনার বর্তমান ঠিকানা ( অর্থাৎ যেখানে চিঠি দিলে আপনি পাবেন), ফোন নম্বর ও ই-মেইল দিবেন৷ উপরের এই অংশটুকু পৃষ্ঠার উপরের মাঝখানে লিখবেন, যাতে করে সহজেই চোখে পরে৷
সার সংক্ষেপ:
অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের আর্থাৎ ৪-৫ বছরের চাকরীর অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সার সংক্ষেপ একটু বেশী প্রয়োজন হবে৷ সর্বোচ্চ ৬-৭ লাইনের মধ্যে আপনার পূর্ব চাকরীর অভিজ্ঞতার কর্মক্ষেত্র সমূহ উল্লেখ করবেন। যদি পূর্ব অভিজ্ঞতার সাফল্য থেকে থাকে তা সংক্ষেপে তুলে ধরবেন (যাদের নেই তাদের প্রয়োজন নেই)৷
ক্যারিয়ার উদ্দেশ্য:
১ থেকে ২ বছরের অভিজ্ঞতা আছে বা সদ্য পাশ করা চাকুরী প্রার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার উদ্দেশ্য বেশি লেখা প্রয়োজন৷ আপনার বর্তমান লক্ষ্য উল্লেখ কি বা আপনার যোগ্যতা কিভাবে প্রতিষ্ঠানের (যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য অবেদন করবেন) প্রয়োজন মেটাতে পারে তার পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরবেন৷ কোম্পানির প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে ক্যারিয়ার উদ্দেশ্য লেখা খুবি গুরুক্তপূর্ন৷
চাকুরির অভিজ্ঞতা:
অভিজ্ঞতা সম্পূর্ন ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে "চাকুরির অভিজ্ঞতা" "শিক্ষাগত যোগ্যতার" আগে হবে এবং সদ্য পাশ করা বা অল্প অভিজ্ঞতা সম্পূর্ন ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে আগে শিক্ষাগত যোগ্যতা তার পরে চাকুরির অভিজ্ঞতা হবে৷
পূর্ব অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে যে সকল তথ্য উল্লেখ করবেন তা হল:
- প্রতিষ্ঠানের নাম
- পদবী
- সময়কাল
- দায়িত্ব ও
- উল্লেখযোগ্য সাফল্য সমূহ।
একই প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পদে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে, তা আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখ করবেন৷
চাকুরির অভিজ্ঞতা উল্লেখ করার সময় প্রথমেই সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা উল্লেখ করবেন এবং শেষ করবেন সর্বপ্রথম কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে৷ খুব কম সময়ের অভিজ্ঞতা বা কম গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা উল্লেখ করবেন না৷ তবে লক্ষ্য রাখবেন অভিজ্ঞতার তালিকার মধ্যে খুব বেশী ফাঁক না থাকে৷
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
পূর্বেই বলা হয়েছে এই অংশটি সদ্য পাশ করা বা অল্প অভিজ্ঞদের জন্য "চাকুরির অভিজ্ঞতা" আগে হবে৷
- ডিগ্রির নাম (যেমন: BCom, HSC, SSC)
- কোর্স সময়কাল
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও বোর্ডের নাম লিখেবন
- পরীক্ষার বছর
- পরীক্ষার ফলাফল
চাকুরির অভিজ্ঞতার মতো এখানেও আপনি আপনার সবচেয়ে সাম্প্রতিক ডিগ্রির উল্লেখ করবেন তার পরে পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো উল্লেখ করবেন৷
কোন ডিগ্রির ক্ষেত্রে যদি আপনার ফলাফল খুব বেশি খারাপ হয়, তাহলে কোনো ডিগ্রির ক্ষেত্রেই ফলাফল উল্লেখ করবেন না৷ মনে রাখবেন, একটি ডিগ্রির ফলাফল উল্লেখ করা এবং অন্য আর একটি ডিগ্রির ফলাফল উল্লেখ না করা দৃষ্টিকটু৷
আপনার যদি কোন বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকে এবং তা আপনার কাজের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে এমন হলে তা উল্লেখ করতে পারেন৷ সেক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, বিষয়, প্রতিষ্ঠানের সময় ও তারিখ উল্লেখ করবেন৷ শিক্ষাগত যোগ্যতার নীচে দিবেন৷
অতিরিক্ত তথ্য:
উপরের অংশগুলোর মধ্যে যে সকল তথ্য পড়ে না কিন্তু চাকরির সাথে সম্পর্কিত সেই সকল তথ্য অতিরিক্ত তথ্যে বর্ণনা করবেন৷
- পেশাগত অর্জন
- পদক/ সম্মাননা/ পুরস্কার
- ভাষাগত দক্ষতা
- কম্পিউটারে দক্ষতা
- লাইসেন্স/ সরকারি পরিচয়পত্র
- প্রকাশিত লেখা ও স্বত্বাধিকার
- স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ড ইত্যাদি
ব্যক্তিগত তথ্য:
ব্যক্তিগত তথ্যে আপনি আপনার পিতামাতার নাম, আপনার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করবেন, কোনো দেশে ভ্রমণ করে থাকলে উল্লেখ করবেন, ধর্ম, শখ, ইত্যাদিও এখানে উল্লেখ করবেন৷
রেফারেন্স:
রেফারেন্সের অংশে আপনি আপনার পরিবারের বা নিকট আত্মীয়দের নাম উল্লেখ করবেন না৷ আপনার ছাত্র জীবনে বা কর্মজীবনে আপনাকে কাছ থেকে দেখেছে এমন ব্যক্তিকেই রেফারেন্স হিসাবে উল্লেখ করবেন৷ যাদেরকে রেফারেন্স হিসেবে দিবেন অবশ্যই তাদের নাম, পদবী, ঠিকানা, ফোন নাম্বার ও ই-মেইল উল্লেখ করবেন৷ সাধারণত রেফারেন্স হিসাবে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ জনের নাম উল্লেখ করাই ভালো৷ তবে আপনি যাদেরকে রেফারেন্স হিসাবে উল্লেখ করবেন তাদেরকে আগে থেকেই জানাতে হবে যে আপনি তাদেরকে রেফারেন্স হিসাবে আপনার জীবন বৃত্তান্তে উল্লেখ করেছেন৷