গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়? মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি?
গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীতের বিকেলে চানাচুর দিয়ে মুড়ি মাখা খেতে বেশ ভালই লাগে। তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে বা বাড়িতে হালকা ক্ষিদে পেলে চা বা বিস্কেটের সাথে মুড়ি খেতে অনেকেই পছন্দ করি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় মুড়ি খাওয়া ঠিক হবে কিনা বা গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয় সে ভয়ে অনেক মায়েরা মুড়ি এড়িযে চলেন। সহজলভ্য এই মুড়ি গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য অনেক উপকারি তা আমরা অনেকেই জানি না। তাই আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয় তা জানব।
গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়?
- গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে গর্ভবর্তী মা ও শিশুর পুষ্টি ঘাটতি পূরন হয়। ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মা ও শিশু দুজনই সুস্থ থাকে।
- মুড়িতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল এবং ভিটামিন বি রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের মিনারেল ও ভিটামিন বি এর ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করবে।
- প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবার হলো মুড়ি যেহেতু গর্ভাবস্থায় শরীরে হাড়ের ক্ষয় হয়, সেহেতু মুড়ি ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করবে এবং গর্ভের সন্তানের হাড় গঠনেও সাহায্য করবে।
- মুড়িতে রয়েছে ক্যালরি ও শর্করা যা গর্ভাবস্থায় আপনাকে এনার্জি দিবে।
- গর্ভাবস্থায় মুড়ি খাওয়ার সব থেকে গুরুক্তপূর্ন কারণ হল, গর্ভাবস্থায় মায়েরা যে বমি বমি ভাবটা অনুভব করেন, সেটা নিয়মিত মুড়ি খেলে কমে যাবে অনেকটা।
- মুড়িতে অ্যাসিডের পরিমাণ খুব কম থাকে যেকারণে বদহজম হওয়ার সম্ভবনা থাকে না বরং অ্যাসিড, অম্বল বা গ্যাস দূর করতে সাহায্য করবে।
- মুড়ির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে সুস্থ থাকতেও সাহায্য করবে।
প্রতি ১৪ গ্রাম মুড়িতে রয়েছে:
- ফসফরাস ১৪ মিলিগ্রাম,
- থিয়ামাইন ০.৩৬ মিলিগ্রাম,
- নিয়াসিন ৪.৯৪ মিলিগ্রাম,
- পটাসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম,
- আয়রন ৪.৪৪ মিলিগ্রাম,
- ম্যা ৫৬ ক্যালরি,
- কার্বোহাইড্রেটস ১২.৬ গ্রাম,
- প্রোটিন ১ গ্রাম,
- ফ্যাট মাত্র ০.১ গ্রাম,
- ফাইবার ০.২ গ্রাম,
- গনেসিয়াম ৪ মিলিগ্রাম।
মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা:
মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা:
- শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে
- রোগ প্রতিরোধ করে
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
- মস্তিষ্কের উন্নতি করে
- হাড় মজবুত রাখে
- পেটের সমস্যা দূর করে
- দাঁতের সমস্যা দূর করে
- বদ হজম দূর করে
- ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে
- অম্বল বা গ্যাস দূর করতে সাহায্য করে
মুড়ি খাওয়ার অপকারিতা:
- বর্তমানে আমরা বাজারে যে মুড়ি কিনতে পাই তাতে ইউরিয়া মিশানো থাকে যা শরীরের জন্য খুবি ক্ষতিকর।
- মুড়িতে অনেক সময় লবণের পরিমান বেশি থাকে, এই কারণে কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মুড়ি খাওয়া উচিত নয়।
- যাদের হাইপার টেনশনের সমস্যা রয়েছে তাদের মুড়ি খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- যেসকল ব্যাক্তি বুকের ব্যথা, হাড়ের ব্যথা, বাতের ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন তাদের মুড়ি খাওয়া উচিত নয়।
- মুড়ি খেলে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তাই যাদের ইউরিক এসিডের সমস্যা আছে তাদের মুড়ি খাওয়া উচিত নয়।
- মুড়ি অতিরিক্ত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করে, ডায়াবেটিস বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- মুড়ি ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, তবে মুড়িতে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যেকারণে অতিরিক্ত মুড়ি খাওয়া যাবে না।
কোন কিছুই অতিরিক্ত ভাল নয় তাই মুড়ি হোক বা অন্য কিছু পরিমাণমতো খাওয়াই ভালো।