ব্রি ধান ৪৯ চাষ পদ্ধতি ও এর বৈশিষ্ট্য

ব্রি ধান ৪৯ চাষ পদ্ধতি

২০০৮ সালে উচ্চ ফলনশীল জাত হিসাবে রোপা আমন মৌসুমে চাষাবাদরে জন্য অনুমোদন দেওয়া হয় "ব্রি ধান ৪৯"। এই জাতটির গড় জীবনকাল ১৩৫ দিন যা "বি আর ১১" এর থেকে ৭ দিন কম। ফলন ৫ - ৫.৫ টন (হেক্টর প্রতি)। জাতটি সঠিক ভাবে চাষাবাদ করতে পারলে অধিক ফলন পাওয়া যাবে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় "বি আর ১১" জাতের চাষাবাদ করা হয় সেসব এলাকায় "ব্রি ধান ৪৯" চাষ করলে সন্তসজনক ফলন পাওয়া যাবে।

ব্রি ধান ৪৯ চাষ পদ্ধতি

  1. চাষ উপযোগী জমি: মাঝারি উঁচু বা উঁচু, এঁটেল দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ জমিতে ব্রি ধান ৪৯ চাষ করার জন্য উপযুক্ত। নিচু জমির (যেখানে পানি জমে থাকে) পানি শুকিয়ে যাবার পরেও ব্রি ধান ৪৯ রোপণ করতে পারবেন।
  2. বীজতলায় বীজ বপন: আষাঢ় মাসের ২য় সপ্তাহ বা ৮ তারিখ থেকে শেষ সপ্তাহ বা ৩০ তারিখ (জুন মাসের শেষ সপ্তাহ বা ২২ তারিখ থেকে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ বা ১৪ তারিখ) পর্যন্ত বীজ বপণ করার উপযুক্ত সময়।
  3. চারা রোপণ: জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ বা ২২ তারিখ থেকে আগস্টের শেষ সপ্তাহ বা ২২ তারিখ (শ্রাবণের ২য় সপ্তাহ বা ৮ তারিখ থেকে ভাদ্রের ২য় সপ্তাহ বা ৮ তারিখ) পর্যন্ত চারা রোপন করার সঠিক সময়।
  4. রোপন দূরত্ব: ২০ × ১৫ সেন্টিমিটার।
  5. চারার বয়স: ২৫ - ৩০ দিন বয়সী চারা রোপণ করতে হবে।
  6. চারার সংখ্যা: প্রতি গোছায় ২ - ৩ টি চারা।
  7. রোপন গভীরতা: ২ থেকে ৩ সে.মি. গভীরতায় চারা রোপণ করতে হবে।
  8. সারের মাত্রা (প্রতি বিঘায়): ইউরযি়া- ২৪ কেজি, টএিসপি- ১২ কেজি, এমপি- ১৪ কেজি, জপিসাম- ১৪ কেজি ও দস্তা- ১ কেজি।
    • জমি প্রস্তুতের সর্বশেষ সময় সবটুকু টিএসপি, এমপি, অর্ধেক জিংক সালফেট এবং অর্ধেক জিপসাম সার একসাথে দিতে হবে।
    • সমান তিন কিস্তিতে ইউরিয়া সার দিতে হবে যথা- ১ম কিস্তি রোপণের ১৫ দিনের মধ্যে, ২য় কিস্তি রোপণের ৩০ দিনের মধ্যে এবং ৩য় কিস্তি রোপণের ৪৫ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।
    • ইউরিয়ার ১ম কিস্তির সাথে অবশিষ্ট জিপসাম ও জিংক সালফেট একসাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
    • ইউরিয়া প্রয়োগ করার সময় জমিতে ২-৩ সে.মি. পানি থাকতে হবে।
    • ইউরিয়া সার প্রয়োগ করার সাথে সাথে জমির আগাছা পরিস্কার করে দিতে হবে যাতে করে ইউরিয়া সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশে যায়।
  9. আগাছা দমন: চারা রোপণের পর যখনি আগাছা দেখা যাবে তখনি নিড়ানি বা হাত দিয়ে ৩০ - ৪০ দিন পর্যন্ত আগাছা পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
  10. রোগ-বালাই বা পোকার আক্রমণ: ব্রি ধান ৪৯ এর রোগ-বালাই বা পোকার আক্রমণ কম হয়। কিন্তু রোগ-বালাই বা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে আনুমোদিত বালাইনাশক আনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। (ইউরিয়ার ১ম কিস্তির সাথে ২ কেজি ফুরাডান (বিঘা প্রতি) প্রয়োগ করা যেতে পারে প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য।
  11. ফসল কাটা: ধানের শিষের শতকরা ৮০ ভাগ ধানের চাল শক্ত ও বাকী ২০ ভাগ ধানের চাল আংশিক স্বচ্ছ ও শক্ত হলে বুঝতে হবে ধান ঠিকমত পেকেছে দেরি না করে ফসল কেটে ফেলতে হবে।
এছাড়াও জাতটির জীবনকাল "র্স্বণা এবং বি আর ১১" এর চেয়ে কম হওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলে আলু, গম ও রবিশস্যের চাষ করা যবে এবং দক্ষিণাঞ্চলে বোরো ধান আগাম চাষ করা যাবে। পহেলা আষাঢ়ে বীজ বপন করলে কার্তিকের মাঝামাঝি ফসল কেটে ঘরে তুলা যাবে।

ব্রি ধান ৪৯ এর বৈশিষ্ট্য

  1. ব্রি ধান ৪৯ এর পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছের উচ্চতা ১০০ থেকে ১০৪ সে.মি.।
  2. ব্রি ধান ৪৯ গাছের আকার-আকৃতি প্রায় বি আর ১১ জাতের মতোই।
  3. জাতটি "বি আর ১১" জাতের থেকে খাটো এবং সহজে ঢলে পরে না।
  4. ব্রি ধান ৪৯ জাতের জীবনকাল ১৩২ থেকে ১৩৫ দিন।
  5. এই জাতের ধান গাছের শীষে ধানের দানাগুলো খুব ঘন বা কাছাকাছি সাজানো থাকে।
  6. ধানের দানাগুলো "বি আর ১১" এবং "ব্রি ধান ৩২" জাতের থেকে কিছুটা চিকন।
  7. ব্রি ধান ৪৯ চালের রান্না করা ভাত খেতে সুস্বাদু এবং ভাত ঝরঝরে থাকে।
  8. ধানের শীষে ফুল আসা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
  9. ব্রি ধান ৪৯ জাতের সবগুলো শিষ একসাথে পাকে।
  10. ব্রি ধান ৪৯ এর পাকা ধান দেখতে খড়ের মত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url