শ্রীকৃষ্ণ অর্থ ও শ্রী কৃষ্ণের উপদেশ

শ্রীকৃষ্ণ
চিত্র: শ্রীকৃষ্ণের প্রতিমা

শ্রীকৃষ্ণ হলেন হিন্দুধর্মের পরম পুরুষোত্তম ভগবান। পুরাণ অনুযায়ী, বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব পালন করা হয়।

শ্রীকৃষ্ণ অর্থ

কৃষ্ণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ গারো নীল বা কালো। কৃষ্ণ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে "সর্বাকর্ষক" অর্থাৎ যিনি আকর্ষণ পূর্বক সকলকে আনন্দ প্রদান করেন।

ব্রহ্ম সংহিতায় (৫/৩০,৩১) বর্ণিত রয়েছে, "তিনি গোপবেশ, ত্রিভঙ্গললিত, মস্তক ময়ূর পুচ্ছ যুক্ত, নয়নদ্বয় পদ্মের পাঁপড়ির মত আয়তাকার ও সুকোমল, গলদেশ শোভমান বৈজয়ন্তী মালা, সুন্দর অধরে শোভিত মোহন মুরলী, গায়ের রং ঘন মেঘের মতো নীল, ঐশ্বরিক সৌন্দর্য, যৌবনের চির নবায়ন।"

শ্রী কৃষ্ণের উপদেশ

হিন্দু ধর্মের সকল অনুসারী শ্রীমদ্ভগবদগীতা সম্পর্কে জানেন। যেখানে শ্রী কৃষ্ণের কিছু বাণী বা উপদেশ বর্ণিত রয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময়, অর্জুন তার নিজের লোকদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে ও প্রাণ নিতে হবে ভেবে ভয়ে ভীত হয়ে পরেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে কিছু উপদেশ দেন, সেই উপদেশই হল শ্রীমদ্ভগবদগীতার বাণী। নিচে শ্রী কৃষ্ণের সেই মূল্যবান উপদেশ সমূহের কয়েকটা পয়েন্ট তুলে ধরা হল।
  • যে ব্যাক্তি শুধুমাত্র নিজের পীরাকে আপন করে জীবন নির্বাহ করে, সেই ব্যাক্তি শক্তিহীন হয়ে পরে। কিন্তু যে ব্যাক্তি সমগ্র সমাজের পীরাকে অন্তরে ধারণ করে জীবন অতিবাহিত করে, সেই ব্যাক্তি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
  • মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হল তার নিজের রহস্য। রহস্য নিজেই আপনাকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। তাই আপনার গোপন কথা কাউকে বলা উচিত নয়।
  • বাস্তবে পরিচয় একজন ব্যক্তির শরীরের সাথে যুক্ত থাকে না, কিন্তু সম্পর্কের ভিত্তি তার শরীরের সাথে যুক্ত। মানুষের স্বভাব, তার আচার-আচরণ ও কর্মই প্রকাশ পায়।
  • যদি কোন ব্যক্তি কোন ঘটনাকে ভয় পায়, তবে সে পরাজিত হবে এবং যে ব্যক্তি সবকিছু হারিয়ে শান্ত থাকে এবং মনোযোগ দেয় সে বিজয়ী।
  • পৃথিবীতে যখন দেখার কিছু্‌ই থাকে না তখন মানুষ ঈশ্বরের দিকে তাকায়।
  • মানুষের নির্দেশিত পথে সময় কখনেই চলে না, বরং মানুষকেই সময়ের নির্দেশিত পথে চলতে হয়।
  • আমি ভগবান হলেও আমার জন্ম জেলখানায়। জন্ম কখনই মানুষের পরিচয় হতে পারে না। কর্মের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয় জীবের প্রকৃত পরিচয়।
  • চিনি এবং লবণ একই রকম দেখতে। পার্থক্য শুধুমাত্র স্বাদে। মানুষ এবং অ-মানুষ দেখতে একই রকম পার্থক্য শুধু আচরণে।
  • যিনি ধর্মের নৌকা প্রস্তুত করেন, তিনিই পার হতে পারেন, তা সমুদ্র হোক বা সংসার।
  • সুখ হল উপলব্ধ করার জিনিস, পাওয়ার কিছু নয়। যে ব্যক্তি সম্পত্তিকে সুখ মনে করে সে আসলে সুখ পায় না। সম্পত্তিকে সুখ বলে মনে করে যে ব্যক্তি সে অবশ্যই নিজের জন্য ধ্বংসকে আমন্ত্রণ জানায়।
  • যে সুখের আশা করে সে সুখ খুজে পায় না, যে সুখ অনুভব করতে জানে সে সুখ পায়। আপনি যদি জানেন আপনার জন্য সুখ কি, তাহলে আপনি অবশ্যই সুখ পাবেন।
  • যে কামনা ত্যাগ করে, 'আমি' এবং 'আমার' বন্দন থেকে নিজেকে মুক্ত করে, সে প্রকৃত শান্তি লাভ করে।
  • প্রেম দেয় উন্নতি, সঠিক ও ভুলের জ্ঞান। প্রেম আর মোহের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বাস্তবে প্রেমের জন্ম হয় করুণা থেকে, আর মোহ জন্মায় অহংকার থেকে। প্রেম মুক্তি প্রদান করে, মোহ আবদ্ধ করে রাখে। প্রেম হল ধর্ম, আর মোহ হল অধর্ম।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url