রমা একাদশীর মাহাত্ম্য

রমা একাদশী সম্পর্কে জানবার জন্য একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণর কাছে জানতে চাইলেন কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের তিথিতে যে একাদশী ব্রত পালন হয় তার নাম কি? কৃপা করে আমাকে অবগত করুন।

তখন শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, "কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের তিথিতে যে একাদশী পালন করা হয় তাকে রমা একাদশী বলা হয়। এই একাদশী পালন করলে দুঃখ, দারিদ্র্য ও নৈতিবাচক শক্তি দুর হইয়া যায়। তাহলে শুনুন রমা একাদশীর মাহাত্ম্য কথা।"

রমা একাদশীর মাহাত্ম্য

বহু বছর পূর্বের কথা, মুচুকুন্দ নামে একজন সুপ্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন। রাজার সাথে অনেক গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের বন্ধুত্ব ছিল। রাজা ছিলেন বিষ্ণুভক্ত মানুষ। তিনি সব সময় সৎপথে চলতেন এবং সৎভাবে রাজ্য পরিচালনা করতেন। রাজার একটি কন্যা সন্তান ছিল, যার নাম চন্দ্রভাগা।

চন্দ্রভাগা বিবাহ উপযুক্ত হয়ে উঠলে তাকে চন্দ্রসেনের পুত্রের সাথে বিবাহ দেওয়া হয়। চন্দ্রসেনের পুত্ররের নাম ছিল শোভন। বিবাহের কিছু দিন পরে শোভন তার শশুর বাড়ি বেড়াতে আসেন। কিন্তু সেই দিন ছিল একাদশী।

চন্দ্রভাগা যখন দেখতে পেলেন যে তার স্বামী শোভন এসেছে তখন সে খুবই চিন্তায় পড়ে গেলেন কারণ তার স্বামী এত দুর থেকে হেঁটে এসেছেন। সে অনেক ক্লান্ত, তাছাড়া সে একটুও খুদা সহ্য করতে পারে না। একথা চন্দ্রভাগা ভালো করেই জানে, তাই পেরেশান হয়ে ওঠে। কিন্তু তার পিতা ধর্মের পথে চলেন, যে কারণে রাজ্যের সকল মানুষকে দশমীর দিন আহার করতে নিষেধ করে দেন। চন্দ্রভাগা ভাবতে লাগলো, "এখন আমি কি করবো।"

যখন শোভন রাজ্যের আদেশ সম্পর্কে অবগত হলেন  তখন তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে বললেন আমি তোমার পিতার আদেশ সম্পর্কে অবগত হয়েছি। এখন আমি কি করবো আমাকে বলো।

তখন চন্দ্রভাগা বলেন, "হে প্রিয় স্বামী আপনি খুদা সহ্য করতে পারেন না, আর আজ একাদশী। একাদশীর দিন এই রাজ্যের পশু পাখি পর্যন্ত আহার করে না আর মানুষতো দূরের কথা। আপনি আপনার নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন করুন। এখানে থেকে আহার গ্রহণ করলে মানুষ আপনাকে নিন্দা করবে। তার উপর পিতা অনেক রাগ করবে। সকল বিষয় বিবেচনা করে আপনার যা ভালো মনে হয় সেটাই করুন।"

শোভন তখন বললো, "আমি অনেক সময় ভেবে বিবেচনা করছি যে আমি নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন করবো না। কপালে যা আছে সেটাই হবে।"
এই বলে শোভন একাদশী পালন করলেন । সারাদিন কেটে সন্ধ্যা হয়ে আসলো। এই রাত্রি সবার কাছে আনন্দিত হয়ে থাকে। কিন্তু শোভন তো খুদা আর তৃষ্ণায় অনেক ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পরেছিল। এভাবে সারা রাত অতিবাহিত হয় এবং সূর্যদয়ের সময় মৃত্যু বরণ করেন। এদিকে রাজা মুচুকুন্দ খুব ধুমধাম করে দাহ কার্য সম্পর্ণ করেন।

শোভন যে একাদশী পালন করে ছিলেন তার নাম হলো রমা একাদশী। এই একাদশী ব্রত পালন করে শোভন এক সুন্দরী রমণী দেবপুরী প্রাপ্ত করেছেন।

একদিন মুচুকুন্দ রাজ্য থেকে এক ব্রাহ্মণ তীর্থভ্রমণ করতে করতে চলে গেছেন দেবপুরীতে। ব্রাহ্মণ দেবপুরীতে গিয়ে দেখতে পেলেন মুচুকুন্দের জামাতা ও চন্দ্রভাগা স্বামী সেখানে রত্নালস্কারে ভূষিত ছিল। ব্রাহ্মণকে দেখে সে আসন থেকে উঠে এসে পায়ে প্রণাম করলেন। এবং ব্রাহ্মণের কাছ থেকে তার প্রিয়তমা স্ত্রী, শশুর ও রাজ্যের প্রজাদের খবর নিলেন।

ব্রাহ্মণ তার কাছে এই সব প্রাপ্তির মাধ্যম জানতে চাইলে শোভন তাকে রমা একাদশীর কথা জানান। ভক্তি ভরে  কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের তিথিতে রমা একাদশী ব্রত পালন করে সে এই সব প্রাপ্তি করেছেন।

তার পরে ব্রাহ্মণ ফিরে আসেন মুচুকুন্দের রাজ্যে। সে এসে মুচুকুন্দকে ও তার স্ত্রীকে সব খুলে বলেন। তখন চন্দ্রভাগা বলেন আপনার এই সব কথা আমার কাছে স্বপ্নের মতন মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার স্বামীকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আমাকে নিয়ে চলুন সেখানে। তখন ব্রাহ্মণ বল্লেন একটা সমস্যা আছে। তার নগর কখনো এক স্থানে থাকে না। চন্দ্রভাগা বললেন, "এর কি কোন সমাধান নাই।" তখন ব্রাহ্মণ বললেন, "আছে, আপনি ভক্তি ভরে রমা একাদশী পালন করুন। তখন ব্রাহ্মণের কথা শুনে চন্দ্রভাগা রমা একাদশী পালন করলেন। আর চন্দ্রভাগা বললেন, "আমাকে নিয়ে চলুন তার কাছে।"

ব্রাহ্মণ তখন চন্দ্রভাগাকে নিয়ে বামদেবের আশ্রমে উপস্থিত হলেন। বামদেবের আশ্রমে অবস্থিত মন্দরা পর্বত। এই আশ্রমে ঋষির কৃপায় ও রমা একাদশী পালনের মাধ্যমে দিব্য শরীর লাভ করে স্বামীর কাছে চলে যায়। আর স্বামীকে দেখে অনেক আনন্দিত হয় ও অনেক দিনের জমানো কথা এক এক করে বলতে থাকেন। আর রমা একাদশীর মাহাত্ম্যের কথা বলতে থাকেন।

শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, "আমি আপনার কাছে দুঃখ, দারিদ্র্য ও নৈতিবাচক শক্তি দুর করার মাহাত্ম্য বর্ণনা করলাম। যে রমা একাদশী পালন করবে বা ভক্তি ভরে শ্রবণ করবে যে স্বর্গলোকে পূজিত হবেন।"
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
Advertisement