বাংলাদেশে শিখ ধর্ম: আগমন ও ইতিহাস

আগমন

বাংলাদেশে শিখ ধর্ম আগমন ঘটে ষোড়শ শতকের শুরুতে, আনুমাণিক ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে। গুরু নানক শিখ ধর্মের প্রচলন করেন এবং তার মাধ্যমেই বর্তমান বাংলাদেশের এই অঞ্ঝলে অর্থাৎ ততকালিন বাংলায় শিখ ধর্মের প্রচার ঘটে। মূলত তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন এবং ধর্ম প্রচার করতেন।

ইতিহাস

গুরু নানন লাহোরের নিকটস্থ রায় ভোয় কি তালবন্দী গ্রামে ১৪৬৯ সালের ১৫ই এপ্রিল একটি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি যুবক বয়সে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতেন এবং মানুষকে এক ঈশ্বরে বিশ্বাসের জন্য আহবান করতেন। ক্রমে ক্রমে তিনি অনেক শিষ্য তৈরি করেন। ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যাবস্থায় বেশ প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন। ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বশরীরে বাংলায় আসেন এবং নিজ ধর্ম বিশ্বাস মানুষের মাঝে প্রচার করতে থাকেন।

গুরুদুয়ারা নানকশাহী

গুরু নানন বেশ কয়েকটি গুরুদুয়ারা বাংলাদেশে স্থাপন করেন। যার মধ্যে অন্যতম "গুরুদুয়ারা নানকশাহী", এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কলা ভবণের পাশে অবস্থিত। কথিত আছে, গুরু নানন বাংলাদেশে আসার পর এখানে বেশকিছুদিন অবস্থান করেন এবং মানুষকে এক ঈশ্বর মতবাদের ধর্ম শিক্ষা দেন। এরপর শিখ ধর্মের ৬ষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ সিং গুরুদুয়ারার স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করেন। তবে অনেকের মতে ৯ম শিখ গুরু তেগ বাহাদুর এই গুরুদুয়ারা নির্মাণ করেছিলেন ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৭২ সালে প্রাথমিক সংস্কার এবং ১৯৮৮-৮৯ সালে ব্যাপক সংস্কার করে বর্তমানরূপ দেয়া হয়। একপর্যায়ে বাংলায় মোট ১৮ টি গুরুদুয়ারা গড়ে ওঠে, তবে বর্তমানে মাত্র ৭টি অবশিষ্ট আছে।

গুরুদুয়ারা নানকশাহী
চিত্র: গুরুদুয়ারা নানকশাহী


গুরুদুয়ারা সঙ্গতটোলা

ঢাকায় অবস্থিত শিখ ধর্মের  আরো একটি প্রধান উপাশনালয় "গুরুদুয়ারা সঙ্গতটোলা"। এটি ঢাকার বাংলাবাজারে অবস্থিত। নবম শিখ গুরু তেগ বাহাদুর এটি নির্মাণ করেন সতের শতকে। তিনি আসাম থেকে ঢাকায় আসেন এবং ১৬৬৬- থেকে ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় দুই বছর এখানে ছিলেন, এসময়েই তিনি এই গুরুদুয়ারা নির্মাণ করেন। বর্তমানে এই গুরুদুয়ার দুইতলা বিশিষ্ট এবং ২য় তলাটি উপসানালয় হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। ২য় তলায় শিখদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ "গ্রন্থসাহেব" রাখা আছে। বহুদিন ধরে তেমন কোনো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় বর্তমানে এটি ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। নিচতলার  কক্ষের দেয়াল এর আবরণ খুলে গেছে, সিঁড়ির ডানদিকের দেয়াল বহুদিন ধরে ভাঙা অবস্থায় আছে এবং এর চারপাশের বেশ কিছু জায়গা দখল হয়ে আছে।
গুরুদুয়ারা সঙ্গতটোলা
চিত্র: গুরুদুয়ারা সঙ্গতটোলা

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এবং উত্তর

শিখ কারা?

শিখ ধর্মের সকল অনুসারীদেরকে শিখ বলা হয়।

শিখ ধর্মের প্রবর্তক কে?

গুরু নানক শিখধর্মের প্রবর্তক।

শিখ শব্দের অর্থ কি?

শিখ শব্দের অর্থ শিষ্য, শিক্ষার্থী, শিক্ষানুরাগী। শিখ শব্দটি সংস্কৃত ভাষার শব্দ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url