পুত্রদা একাদশী মাহাত্ম্য
একদিন যুধিষ্ঠির শ্রী কৃষ্ণের কাছে জানতে চেয়ে বললেন- হে কৃষ্ণ! আপনার আজানা কিছুই নয়, কৃপা করে আমাকে জানান, পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি? মাহাত্ম্যই বা কি? কোন দেবতাকে সেই দিনে পূজা করা হয় এবং আপনি কার সেবাই সন্তুষ্ট হয়ে এই ব্রতফল প্রদান করেছিলেন?
উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে মহারাজ! এই একাদশী পুত্রদা নামে পরিচিত। এই একাদশীর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা এবং পাপ বিনাশকারী সিদ্ধিদাতা নারায়ণ। ত্রিলোকে এর চেয়ে উত্তম ব্রত আর নেই। নারায়ণ এই ব্রতকারীকে যশস্বী ও বিদ্ধান করে তোলে।
এই বলে তিনি যুধিষ্ঠিরকে ব্রতের মাহাত্ম্য বলতে শুরু করেন। নিচে শ্রীকৃষ্ণ বর্ণিত পুত্রদা একাদশী মাহাত্ম্য তুলে ধরা হয়েছে।
পুত্রদা একাদশী মাহাত্ম্য:
ভদ্রাবতী পুরীতে "সুকেতুমান" নামে এক রাজা বাস করতেন। তার সহধর্মিনীর নাম ছিল শৈব্য। তাদের দাম্পত্য জীবণ বেশ সুখেই অতিবাহিত করছিলেন। এমনকি সকল প্রকার সুখ, সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি ও বৈভবের বাস ছিল তার রাজ্যে। তবে রাজা সুকেতুমান ও শৈব্যের বিবাহের বহু বছর পার হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোন সন্তান ছিল না। পুত্র সন্তান লাভের আশায় তিনি অনেক ধর্ম-কর্মের অনুষ্ঠান করেও যখন পুত্রলাভ হল না, তখন তিনি দুশ্চিন্তায় ভেঙ্গে পরেন। যে কারণে ঐশ্বর্যবান হয়েও সন্তানহীন রাজার মনে কোন সুখ ছিল না।
রাজা সুকেতুমান ভাবতেন পুত্রহীনের জন্ম বৃথা এবং গৃহশূণ্য। পিতৃ-দেব-মনুষ্যলোকের কাছে যে ঋণ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, তা পুত্র ছাড়া শোধ হয় না। এছাড়াও পুত্রবানদের এই জগতে যশলাভ ও উত্তম গতি লাভ হয় এবং তাদের আরোগ্য, আয়ু, সম্পত্তি প্রভৃতি বিদ্যমান থাকে। এরকম নানা দুশ্চিন্তা করতে থাকলেন এবং এক পর্যায়ে আত্মহত্যা করবেন বলে মন স্থির করলেন। কিন্তু পরবর্ততে চিন্তা করে দেখলেন- আত্মহত্যা মহাপাপ, যার ফলে শুধু দেহ নষ্ট হবে, কিন্তু তার পুত্রহীনতা দূর হবে না ভেবে আত্মহত্যার কথা মন থেকে ঝেরে ফেললেন। তবে, কোন ভাবেই রাজকার্যে মন বসাতে পারলেন না।
তারপর একদিন রাজা সুকেতুমান এক নির্জন বনে গেলেন। বনে ভ্রমণ করতে করতে তিনি এক সরোবরের কাছে পৌঁছান এবং সেখানেই হতাশ মনে বসে থাকেন। সরোবরের পাসে কিছু দূরে ঋষিদের একটি আশ্রম দেখতে পান। রাজা সেই আশ্রমে গিয়ে সমস্ত ঋষির শ্রীচরণে দন্ডবৎ প্রণাম করলেন। ঋষিগণ রাজাকে বললেন– হে মহারাজ! আমরা আপনার প্রতি খুবি প্রসন্ন। আপনার কি আকাঙ্ক্ষা রয়েছে আমাদের বলুন। রাজা বললেন– হে ঋষিগন, আমি নিসন্তান তাই পুত্রসন্তান কামনায় অধীর হয়ে পড়েছি। এখন আপনাদের দেখে হৃদয়ে আশার সঞ্চার হয়েছে। দুর্ভাগাকে অনুগ্রহ করে একটি পুত্র প্রদান করুন। তখন ঋষিরা সন্তান লাভের জন্য রাজাকে পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীতে উপবাস ও পূজা করার উপদেশ দেন এবং পুত্রদা একাদশীর মহিমা বর্ণনা করেন।
রাজা তার সমস্যার সমাধান পেয়ে খুশি হয়ে রাজ্যে ফিরে আসেন। পুত্রদা একাদশী ব্রত এলে রাজা ও তাঁর স্ত্রী ব্রত পালন করেন এবং নিয়মানুযায়ী নারায়ণের পূজা করেন। ফলে রাণী গর্ভবতী হন এবং যথা সময়ে রানী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পুত্রদা একাদশী ব্রতের পুণ্যের ফলে রাজা একটি পুত্র লাভ করেন।
শ্রীকৃষ্ণ আরো বললেন- হে মাহারাজ! এই ব্রত পালন করা সকলের কর্তব্য। মানব কল্যাণের জন্য আমি আপনার কাছে এই ব্রতকথা বর্ণনা করলাম।
যারা নিষ্ঠার সাথে এই পুত্রদা একাদশী ব্রত পালন করবে, তারা ‘পুত’ নামক নরক থেকে মুক্তি পাবে (নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তান লাভ করতে পারবে)। আর যারা এই ব্রতকথা শ্রবণ করবে তারা অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল পাবেন। ব্রহ্মান্ডপুরাণে এই মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।