দূর্গা পূজার ইতিহাস

দূর্গা পূজার ইতিহাস
চিত্র: দূর্গা পূজা

দূর্গা পূজার ইতিহাস

দূর গতি নাশিনী নামে যিনি আমাদের কাছে পরিচিত তিনিই হলেন দেবী দুর্গা। দেবী দুর্গা কে? কিভাবে তার আগমন হলো? তা ছোট বেলা থেকেই আমরা বাবা-মা, দাদু ও ঠাকুরমাদের কাছ থেকে শুনে এসেছি, একসময় মহিষাসুর নামে অসুরদের এক রাজা ছিলেন। সেই সময় মহিষাসুর দেবতাদের যুদ্ধে আহবান করেন। সেই যুদ্ধে দেব সৈন্যরা অসুরগণের নিকট পরাজিত হয়ে স্বর্গ ত্যাগ করেন। পরাজিত দেবতারা কোনো উপায় না পেয়ে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিবের নিকট শরণাপন্ন হন এবং দেবতারা তাদের দুর্দশা ও মহিষাসুরের শক্তি সম্পর্কে জানালেন। দেবতাদের দুর্দশার কথা শুনে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব খুবই ক্রোধান্বিত হলেন। ক্রোধে তাদের শরীর থেকে মহাতেজ নির্গত হতে শুরু করলো সাথে অন্যান্য দেবতাদের শরীর থেকেও নির্গত হতে শুরু করে তেজরশি। তখন সকল তেজরশি একত্রিত হয়ে এক নারী দেবীমূর্তি ধারণ করো। সেই দেবীমূর্তিকে মহিষাসুরকে বধ করার জন্য দেবতারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করলেন। তখন দেবী দূর্গা মহিষাসুরের সাথে ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পর ১০শম দিনে মহিষাসুরের বিরুদ্ধে জয় লাভ করে দেবতাদের স্বর্গ রাজ্য ফিরিয়ে দেন (শ্রী শ্রী চণ্ডীর কাহিনি অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে দেবী দূর্গার আবির্ভাব হয়, এবং শুক্লা দশমীতে মহিষাসুকে-বধ করে জয় লাভ করেন)।

জয়ের আনন্দে দেবী গর্জে উঠেন, সেই গর্জনে সমগ্র আকাশ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং প্রতিধ্বনি হতে থাকে। তা দেখে সকল দেবতা আনন্দে জয়ধ্বনি করতে থাকেন ও সকলে মিলে তাকে "জয়া" নাম প্রদান করেন এবং ভক্তিভরে নতমস্তকে দেবীকে সন্মান জানালেন।

তারপর "লঙ্কার রাবণ" নিজের দুর্গতি নাশ করার জন্য দেবী দূর্গার পূজা প্রথম শুরু করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল মনোবাসনা পূর্ণ হওয়া এবং দুর্গতি নাশ করা। যে কারণে অনেকে দেবীকে দুর্গতিনাশিনী নামেও ডাকেন।

আন্যদিকে, শ্রীরামচন্দ্র তার মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য ১০৮ টি নীল পদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা করার সংকল্প করেছিলেন। সেই সময় ছিল শরৎকাল, ১০৮ টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে যথারীতি নবপত্রিকা বেধে চারদিন পূজার সিদ্ধান্ত নিলেন। যখন দেবীকে ১০৮ টি পদ্ম নিবেদন করতে যাবে, একটি ফুল কম। হনুমানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যে, আমি ১০৮ টি পদ্মই এনেছিলাম, কি করে একটি কম পরল সে বিষয়ে আমার ধারণা নেই।" উপায় না পেয়ে আবার নীল পদ্ম খুজতে বের হলেন হনুমান। কিন্তু একটি পদ্ম পেলো না, নিরাশ হয়ে ফিরে আসলেন তিনি। রামচন্দ্র ভাবলেন ১০৮ টি পদ্ম ছাড়া পূজা বিফলে যাবে এখন কি করা যায়। হঠাৎ শ্রীরামের মনে হল, তাকে সবাই "কমল নয়ন" বলে কারণ তার চোখ পদ্মের মতো। তিনি তার একটি চোখ দেবীর চরণে অর্পণ করবেন এই ভেবে তিনি তার বান দিয়ে নিজের চোখ উপড়াতে গেলেন ঠিক তখনি দেবীদূর্গা তাকে দর্শন দিলেন এবং জানালেন, "আপনার পরীক্ষা নেবার জন্য আমি একটি পদ্ম হরণ করে নিয়েছিলাম।" দেবী দূর্গা বললেন – হে রাম! আপনি নিজেকে চিনুন, আপনিই স্বয়ং ত্রি লোকের অধিপতি বিষ্ণু। মাতা লক্ষ্মী রুপে সীতা দেবীকে যে রাবন হরণ করেছে, সে স্বয়ং তার মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আপনি দুরাচারি রাবনকে বধ করে আপনার মনোবাসনা ও ধর্ম সংস্থাপন করুন।"

হিন্দুধর্মের সব থেকে বড় উৎসব হলো দুর্গাপূজা। সকল ধরণের সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম কানুন মেনে শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব পালন করা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url