হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কয়টি?
হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ একটি, যার নাম "বেদ"।
বেদ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান বা জানা (To Know)। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরের বাণী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সংস্কৃত ‘বিদ’ ধাতু থেকে বেদ শব্দটি নিস্পন্ন হয়েছে [বিদ+ঘঙ = বেদ]। ঋষিগণ বৈদিক যুগে বেদকে ভিত্তি করে চারটি মূল গ্রন্থ রচনা করেন [বি.দ্র. যারা বেদ আবিষ্কার করেছেন তাদের বলা হয় ঋষি]। বেদের মূল আবিষ্কারক জনায়েক মহাপ্রাজ্ঞা এবং বেদের অন্তর্নিহিত আধাত্মিকতা আবিষ্কার করেছেন ঋষিগণ।এই গ্রন্থে প্রকৃতির পূজার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
বেদের রয়েছে ৪ টি ভাগ: ১। ঋগ্বেদ, ২। সামবেদ, ৩। যজুর্বেদ ও ৪। অথর্ববেদ এতে মোট মন্ত্র সংখ্যা ২০,৩৭৯টি। এক একটি বেদ আবার ৪ টি ভাগে বিভক্ত: সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, ও উপনিষদ্। কিছু গবেষক "উপাসনা" নামে পঞ্চম শ্রেণীরও উল্লেখ করে থাকেন।
বেদের ৪ টি অংশ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
ঋগ্বেদ:
ঋগ্বেদ হল ভারতীয় প্রাচীনতম বেদ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এর প্রধান বিষয়বস্তু হল- পরমাত্মা, আত্মা ও প্রকৃতি। এই পাঠটি মূলত ১,০২৮ টি বৈদিক সংস্কৃত সূক্ত যা ১০ টি মন্ডলে বিভক্ত। ঋগ্বেদের সূক্তগুলিতে মোট ১০,৫৫২ টি 'ঋক' বা 'মন্ত্র' রয়েছে।
ঈশ্বর, দেব-দেবতা এবং প্রকৃতির আলোচনা ঋগ্বেদে প্রাধান্য পেয়েছে। ঋগ্বেদের সংকলনকাল ১৫০০ - ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
যজুর্বেদ:
যজুর্বেদ হল গদ্য মন্ত্রের বেদ। যা বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ। যজ্ঞের আগুনে পুরোহিতের কাজ ও কর্তব্য এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত আচার-অনুষ্ঠান এই গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। যজুর্বেদে ১,৯৭৫ টি মন্ত্র রয়েছে। যজুর্বেদ রচনার সঠিক তারিখ জানা যায় না। তবে, ঐতিহাসিকদের মতে, যজুর্বেদ ১১০০ - ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে সংকলিত হয়েছিল।
সামবেদ:
সামবেদ সঙ্গীত ও মন্ত্রের বেদ। সামবেদ হল বেদের তৃতীয় অংশ, হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ। এটি বৈদিক সংস্কৃতে লেখা। সামবেদে ১,৮৭৫ টি মন্ত্র বা 'ঋচা' আছে। বেদের প্রথম অংশের ঋগ্বেদ মন্ত্রগুলির সাথে এই মন্ত্রগুলির অনেক মিল রয়েছে। সামবেদ সংহিতার তিনটি বিভাগ রয়েছে: পূর্বাচ, মহানামনিয়ার্ক এবং উত্তরার্চ। এটি একটি প্রার্থনার বই এবং বর্তমানে সামবেদের তিনটি শাখা রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই বেদের বেশ কিছু পাণ্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয়েছে।
ঐতিহাসিকগণ সামবেদের আদি অংশকে ঋগ্বৈদিক যুগের সময় বলে মনে করেন। তবে, বেদের যে অংশের অস্তিত্ব এখনও পাওয়া যায়, তা বৈদিক সংস্কৃত ভাষার পরবর্তী-ঋগ্বৈদিক মন্ত্র পর্যায়ে রচিত। এই খণ্ডটির সংকলনের সময়কাল ১২০০ - ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
অথর্ববেদ:
অথর্ববেদ হল বেদের চতুর্থ ভাগ, হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ। অথর্ববেদ শব্দটি দুটি সংস্কৃত শব্দ 'অথর্বণ' (জীবণ) এবং 'বেদ' (জ্ঞান) এর সংমিশ্রণ। অথর্ববেদ বৈদিক সাহিত্যের পরবর্তী সংযোজন। অথর্ববেদ বৈদিক সংস্কৃতে রচিত ২০ টি অংশে বিভক্ত এই বইটিতে ৭৩০ টি স্তোত্র এবং ৫,৯৭৭ টি মন্ত্র রয়েছে। অথর্ববেদের স্তোত্রগুলির এক-ষষ্ঠাংশ ঋগ্বেদ থেকে সংকলিত। ১৫ তম এবং ১৬ তম অধ্যায় ব্যতীত এই গ্রন্থের স্তোত্রগুলি বিভিন্ন বৈদিক ছন্দে রচিত। এই বইটির দুটি পৃথক শাখা রয়েছে: পিপ্পালাদ ও শওকিয়া। এই দুটি শাখা আজও বিদ্যমান। পাইপ্পালদা শাখার নির্ভরযোগ্য পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গেছে বলে মনে করা হয়। তবে, ১৯৫৭ সালে, ওড়িশায় ভালভাবে সংরক্ষিত পাম-পাতার পাণ্ডুলিপির একটি সেট আবিষ্কৃত হয়েছিল। অথর্ববেদ ১০০০ - ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে সংকলিত হয়েছিল।
বেদ ছাড়াও হিন্দু ধর্মের আরো অনেক ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। যেমন: গীতা, পুরাণ, বেদান্ত, স্মৃতি সংহিতা, আগামশাস্ত্র, চন্ডী, রামায়ণ, উপনিষদ, ষড়দর্শন, ইত্যাদি।