মোক্ষদা একাদশী মাহাত্ম্য

মোক্ষদা একাদশী মাহাত্ম্য

বাংলা পঞ্জিকার অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশতম দিন মোক্ষদা একাদশী নামে পরিচিত। মোক্ষদা একাদশী হল পাপ থেকে মুক্তি এবং মৃত্যুর পরে মোক্ষ লাভের জন্য ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা করার জন্য নিবেদিত একটি শুভ দিন। তুলসী, তুলসী মঞ্জুরী, ধূপ, প্রদীপ ইত্যাদি দিয়ে শাস্ত্র অনুসারে শ্রী বিষ্ণুর পূজা করতে হয় এবং দশমী ও একাদশী পালন করতে হয়। এই একাদশীর দিনে স্তবস্তুতি, নৃত্য-গীত প্রভৃতিসহ রাত্রিজাগরণ করা কর্তব্য।

মোক্ষদা একাদশীর ইতিহাস মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করলে সকল পাপ বিনষ্ট হয়। যে সমস্ত পিতৃপুরুষেরা নিজেদের পাপে নরকে গমন করেছেন, তাদেরকে যদি এই ব্রত পালনের বিন্দু মাত্র পুণ্যফল প্রদান করা হয় তবে তারাও নরক-যন্তনা থেকে মুক্তি লাভ করবেন। মোক্ষদা একাদশী সম্পর্কে পদ্ম পুরাণ ও ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডপুত্র যুধিষ্ঠিরের কাছে বর্ণনা করেছিলেন তা নিচে দেয়া হয়েছে।

মোক্ষদা একাদশী মাহাত্ম্য

বৈখানস নামে এক রাজা চম্পক নগরিতে বাস করতেন, তিনি সমস্ত গুণাবলীতে সমৃদ্ধ ছিলেন এবং প্রজাদের সাথে পুত্রের ন্যায় আচরণ করতেন। তার রাজ্যে বহু জ্ঞানী ব্রাহ্মণ বাস করতেন। সমস্ত রাজ্যই ছিল বেশ সমৃদ্ধশালী। এক রাতে, রাজা স্বপ্ন দেখেন, তার পিতা যম দ্বারা শাসিত নরকে যন্ত্রণা ভোগ করছেন। রাজার পিতা তাকে লক্ষ্য করে বললেন- "হে পুত্র, তুমি আমাকে নরক-যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার কর।" পিতার এমন গতি দেখে রাজার অন্তরে সুখ নেই। তাই পরেরদিন ব্রাহ্মণদের ডেকে তার এই দুঃস্বপ্নের কথা বললেন এবং কিভাবে আমার মৃত পিতাকে নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে মোক্ষ প্রদান করতে পারি সে বিষয়ে আমাকে উপদেশ করুন। ব্রাহ্মণগণ রাজাকে ত্রিকালজ্ঞ মহর্ষি পার্বত মুনির কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

ব্রাহ্মণদের উপদেশ শুনে বৈখানরা তাদের নিয়ে সেই পর্বত মুনির আশ্রমে গেলেন। তারা দূর থেকে পার্বত মুনিকে সষ্টাঙ্গ প্রণাম করে তার কাছে আসেন। মুনিবর রাজার কুশলবার্তা জিজ্ঞেস করলে রাজা বৈখানস বললেন আপনার কৃপায় আমার সবই কুশল। তবে আমি একদিন স্বপ্নে পিতার নরক যন্ত্রণা ও আর্তনাদ শুনে খুবই দুঃখিত ও চিন্তাগ্রস্ত। হে ঋষি! কোন পুণ্যের ফলে আমার পিতা সেই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবে, সেই পথ জানতেই আপনার কাছে এসেছি।

সব শুনে পর্বত মুনি কিছুক্ষণ ধ্যান করে বললেন- "হে রাজা! তোমার পিতা পূর্বজন্মে অত্যন্ত কামাচারী ছিলেন বলেই এমন গতি লাভ করেছেন। এই পাপ থেকে মুক্তির একটাই উপায় আছে তা হল - "অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের মোক্ষদা একাদশী" এই দিন উদযাপন করুন এবং পিতাকে সেই পুণ্যফল অর্পণ করুন। সেই পুণ্যফলের প্রভাবে আপনার পিতা মুক্তি পাবেন।

মুনির কথা শুনে রাজা মনে শস্তি পেলেন এবং নিজগৃহে ফিরে এলেন। সেই পবিত্র তিথির আবির্ভাবে রাজা তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে নিয়মানুযায়ী মোক্ষদা একাদশী ব্রত পালন করেন। তিনি তার পিতাকে ব্রতের পুণ্যফল দান করলেন। পুণ্যফল দান করার সাথে সাথে আকাশ থেকে ফুলের বর্ষণ শুরু হতে লাগল। "হে পুত্র, তুমি ভালো থাকো" এই বলে বৈখানস রাজার পিতা নরক থেকে মুক্তি পেয়ে স্বর্গে চলে গেলেন।

সারসংক্ষেপ: ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, মোক্ষদা একাদশীর উপবাসকারী ব্যাক্তির আসক্তি, লোভ, হিংসা এবং সমস্ত পাপ দূর হয়। এই উপবাসের প্রভাবে সাধকের পরিস্থিতি অনুকূলে চলে আসে। যে ব্যক্তি এই মঙ্গল দায়িনী মোক্ষদা একাদশীর ব্রত পালন করেন তার সকল পাপ নষ্ট হয়ে যায় এবং মৃত্যুর পর স্বর্গ লাভ করেন। চিন্তামণির মতো এই ব্রত শ্রীকৃষ্ণেরও খুব প্রিয়। যে এই ব্রতকথা পাঠ করেন এবং যে মনযোগ সহকারে শ্রবণ করে, তারা উভয়েই বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url