নমশূদ্র কারা? নমঃশূদ্র পদবী

নমঃশূদ্র পদবী

নমশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ আগে চণ্ডাল নামে পরিচিত ছিল। তারা আচার-অনুষ্ঠান বর্ণ ব্যবস্থার বাইরে চার স্তরে বাস করতেন সে কারণে, হিন্দু উচ্চ বর্ণ সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের বহিষ্কৃত ও অস্পৃশ্য দৃষ্টিতে দেখতেন।

নমঃশূদ্র সম্প্রদায়টি তাদের জন্মভূমিতে ঐতিহ্যগতভাবে মাছ ধরতেন ও নৌকার চালক হিসেবে কাজ করতেন। পরে জলাভূমিগুলি কৃষি কাজের জন্য উপযুক্ত করায় তাদের প্রধান পেশা হয়ে উঠে কৃষি উৎপাদন। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবি খারাপ ছিল এবং ঋণের হার ছিল অনেক বেশি।

নমশূদ্র কারা?

নমশূদ্র জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু লোককাহিনী রয়েছে। নমশূদ্ররা এই প্রাচীন লোককাহিনী মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। তদুপরি, পৌরাণিক উৎসের তত্ত্ব রয়েছে যা পৌরাণিকভাবে সত্য বলে বিশ্বাস করা হয়। "শক্তিসঙ্গম" গ্রন্থটি বিনয়তােষ ভট্টাচাৰ্য কর্তৃক সম্পাদিত বর্ণ সৃজনের পৌরাণিক উৎপত্তির বর্ণনা করা হয়েছে। গ্রন্থে বলা হয়েছে যে নমশূদ্ররা ব্রাহ্মণ মর্যাদার জন্য যোগ্য। এই প্রেক্ষাপটেই একজন মহেশ তর্কালঙ্ক লিখেছিলেন নমশূদ্রদের পূর্বপুরুষ নমসমুনি। সম্প্রতি প্রকাশিত স্বজান্তেকথা বা স্মৃতিকথা থেকে নমশূদ্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু আধুনিক সময়ে বিভিন্ন বর্ণের বংশের মধ্যে একটি স্পষ্ট আদিম রেখা বা পার্থক্য খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। তবে, প্রতিটি জাতির মধ্যে নিজেদেরকে মহান করে দেখার একটি সহজাত প্রবণতা রয়েছে।

নমশূদ্র বলতে বিশেষ করে বাংলায় একটি সম্প্রদায়ের নাম বোঝায়। নমশূদ্ররা ঐতিহ্যগতভাবে বংশ পরম্পরায় কৃষিকাজ করে আসছে। কেউ কেউ নাবিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। মূলত তারা চতুর্বর্ণাশ্রম বহির্ভূত "জাতি বা কৌম" যারা পূর্ব বাংলার নিচু জলাভূমি অঞ্চলে বসবাস করে। ভারতবর্ষের উচ্চবর্ণের ব্যাক্তিরা নমশূদ্রের অপমানজনক বা নিন্দাজনক চণ্ডাল নামে আখ্যায়িত করে। বাংলা একাডেমির সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধানে বলা হয়েছে যে নমশূদ্ররা বাঙালি হিন্দুদের বৃহত্তম কৃষি সম্প্রদায়।

নমঃশূদ্র পদবী

পাল যুগ শেষে, সেন বংশের রাজত্বকালে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব কমে যায় এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্ম প্রভাব বিস্তার করে। এ সময় বল্লাল সেন কর্ম ও পেশাভেদে হিন্দু জাতিকে ৩৬টি জাত বা শ্রেণীতে ভাগ করেন। ধারণা করা হয়, এ সময় থেকে হিন্দু সমাজে জাত, শ্রেণী বা পদবির প্রচলন শুরু হয়।

অষ্টাদশ শতকে বাঙালি হিন্দু সমাজে বাহ্মণ ও শূদ্র নামে প্রধান দুটি বর্ণ হয়ে ওঠে। বাহ্মণদের কাছাকাছি সম্মানিত ব্যাক্তিদের এসময় শূদ্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে শূদ্রের সংখ্যা বেড়ে যায়, একারণে শূদ্রদের আরো তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। উক্ত তিনভাগের তৃতীয়ভাগ: "অধম সংকর বা অস্পৃশ্য" এ স্থান পায় নমঃশূদ্র পদবীর সকলেই।

নমঃশূদ্র পদবীর সকলে ছিলেন একেবারেই ব্রাত্য। এমনকি শহরের মধ্যে তাদের বসবাসের অনুমতিও দেওয়া হতোনা অনেক জায়গায়। এমনটি হতে দেখা যায় অষ্টাদশ শতাব্দিতে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সময়কালে।

তবে রাজা ও রাজ্যভেদে নমঃশূদ্র পদবীর মানুষ সমাজের উঁচু শ্রেণীর মর্যাদাতেও ছিলেন। মূলত রাজ্যভেদে একেক পদবীর লোক একেক মর্যাদা লাভ করতো।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url