ভঙ্গিল পর্বত কাকে বলে? কয় প্রকার? কিভাবে সৃষ্টি হয়?

ভঙ্গিল পর্বত
চিত্র: ভঙ্গিল পর্বত

ভঙ্গিল পর্বত: ভূপৃষ্ঠের উঁচু নিচু ভাজ বিশিষ্ট পাহাড়গুলোকে ভঙ্গিল পর্বত বলা হয়। ভূপৃষ্ঠের উপরের অংশের নরম শিলা পার্শচাপের ফলে এমন ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ, ভারতসহ পৃথিবীর পার্বত্য এলাকাগুলোতে এমন পর্বত দেখা যায়। সবচেয়ে বড় ভঙ্গিল পর্বতগুলোর মধ্যে রয়েছে হিমালয়, আটলাস, আল্পস ইত্যাদি। এই শ্রেণীর পর্বতগুলো ৫ হাজার বা তারও বেশি উচ্চতা সম্পন্ন হতে পারে। উচু নিচু পর্বত চূড়া হবার কারণে দূর থেকে দেখতে অনেক সুন্দর ও মনমুগ্ধকর লাগে ভঙ্গিল পর্বত।

ভঙ্গিল পর্বত কয় প্রকার?

ভঙ্গিল পর্বত প্রধানত দুই প্রকার, যথা:
১. প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত,
২. নবীন ভঙ্গিল পর্বত।

প্রার্চীন ভঙ্গিল পর্বতগুলের মধ্যে অন্যতম: যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালেশিয়ান, ভারতের আরাবল্, ইউরোপের ক্যালিডোনিয়ান প্রভৃতি। নবীন ভঙ্গিল পর্বতের মধ্যে অন্যতম হিমালয়, দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ, ইউরোপের আল্পস, উত্তর আমেরিকার রকি প্রভৃতি। পৃথীবির বিভিন্ন প্রান্তে এখনো নবীন ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হচ্ছে, যার অধিকাংশই বিভিন্ন সময়ের আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ভূমিকম্পন ও ভূমি ধ্বষের ফলে সৃষ্টি হওয়ার পথে।

ভঙ্গিল পর্বত কিভাবে সৃষ্টি হয়?

ভঙ্গিল পর্বত কিভাব সৃষ্টি হয়েছে তা বিভিন্ন মতবাদে প্রকাশ করা হয়েছে। ভঙ্গিল পর্বত কিভাব সৃষ্টি হয়েছে তার বিবরণ হিসেবে বিভিন্ন মতবাদে প্রচলিত রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান দুটি মতবাদ হলো: ১. মহীখাত তত্ত্ব, ২. পাতভূগাঠনিক তত্ত্ব। নিচে এই দুই মতবাদ/ তত্ত্বের আলোকে বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

১. মহীখাত তত্ত্ব

মহীখাত তত্ত্ব অনুসারে ধারণা করা হয়, বর্তমানে যে স্থানগুলোতে বড় বড় ভঙ্গিল পর্বত রয়েছে সেই স্থানগুলোতে পূর্বে বিশাল অগভীর সমুদ্র ছিল। যেগুলোকে মহীখাত বলা হয়। বছু বছর ধরে এই মহীখাতগুলোর উভয় পাশের স্থলভাগ ভেঙে পলি জমতে থাকে। একসময় মহীখাতগুলোর তলোদেশ অনেক পলী জমার ফলে নিম্নমূখী চাপ বেড়ে যায়। ফলে ক্রমশই চারপাশের স্থলভাগ মহীখাতের দিকে সরে আসে এবং মহীখাত সরু ও গভীর হতে থাকে। গতীশীল ভূখন্ডের প্রবল চাপের সাথে সাথে ভূ আলোরণের সৃষ্টি হয়। এর ফলে মহীখালের তলদেশের জমা হওয়া পাললিক শিলা সংকুচিত হয় এবং প্রবল বেগে বাইরে বেরিয়ে আসে। এভাবে পাললিক শিলাস্তর জমা হয়ে সৃষ্টি হয় নতুন একটি ভঙ্গিল পর্বত।

২. পাতভূগাঠনিক তত্ত্ব

অনেক ভূ বিজ্ঞানী ও ভূতত্ববিদের মতে শিলামন্ডলের নীচের অংশ বিভিন্ন খন্ড বা পাতে বিভক্ত। ভূ অভ্যন্তরের উত্তাপের ফলে নরম শীলার স্রোতের কারণে পাতগুলি সবসময়েই গতিশীল থাকে। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, পাতগুলির নিজস্ব গতিশীলতার কারণে পরস্পপরের মধ্যে ঘর্ষণ সৃষ্টি হয়, এতে ঘর্ষণস্থলে মহীখাত বরাবর সঞ্চিত পলিতে প্রচন্ড চাপ পড়ে এবং ঘর্ষণের স্থলে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url