কাশ্যপ গোত্র কারা ? Kashyap Gotra in Bengali

কাশ্যপ গোত্র
চিত্র: কাশ্যপ মুনি [ফটো সোর্স: Wikimedia]
Kashyap Gotra in Bengali

কাশ্যপ গোত্র কারা?

কাশ্যপ মুনির বংশধরদের কাশ্যপ গোত্র বলা হয়।

কাশ্যপ গোত্র খুবই বিখ্যাত একটি গোত্র। সমস্ত জীবই কশ্যপের বংশধর। যখন একজন ব্যক্তি তার গোত্র সম্পর্কে জানেন না সচেতন নয় তখন পুরোহিতগন তাকে কাশ্যপ গোত্রের কথা বলেন।

কাশ্যপ মুনি:

ব্রহ্মাপুত্র মহর্ষি মরীচির উরসে কলার গর্ভে জন্ম হয় মহর্ষি কাশ্যপের।
কাশ্যপ মুনি "দক্ষ প্রজাপতির" ১৩ কন্যার সাথে বিবাহ করেন এবং তাদের গর্ভেই দেব-দানব ইত্যাদির জন্ম হয়েছিল।
কাশ্যপ গোত্রের প্রবর মুনিদের নাম- কাশ্যপ, নৈধ্রুব, অপ্সার,
কাশ্যপ হল প্রাচীন আয়ুর্বেদিক ঋষি যাকে এখন মন্বন্তরের সপ্তর্ষিদের প্রথম হিসাবে গন্য করা হয় (কাশ্যপ, অত্রি, বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, জমদগ্নি, ভরদ্বাজ এবং গৌতম যাদের সপ্তর্ষি বলা হয়)।
প্রাচীন আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ কাশ্যপ সংহিতা বা জীবকীয় তন্ত্র হল তাঁর অর্জিত চিকিৎসা জ্ঞানের একটি সংকলন যার মধ্যে রয়েছে আয়ুর্বেদিক শিশু স্বাস্থ্য, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ, প্রয়োগ ও সিদ্ধান্তসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কশ্যপের ১৩ ধর্মপত্নী এবং বংশধর:

নিচে কশ্যপের ধর্মপত্নীদের নামের তালিকা দেয়া হয়েছে:

১. অদিতি৬. সুরসা১১. ইরা
২. দিতি৭. সুরভী১২. বিশ্বা
৩. কদ্রু৮. বিনতা১৩. মুনি
৪. দানু৯. তমরা
৫. অরিষ্ট১০. ক্রোধভাষ

অদিতির গর্ভে জন্ম নেয়া দ্বাদশ আদিত্যের মধ্যে ইন্দ্র একজন।
দিতির গর্ভে রাক্ষসরা জন্মগ্রহণ করেছিল।
এভাবে তার বংশের থেকে দেবতা, দৈত্য, দানব, মানুষ, সাপ, পশু, পাখি ইত্যাদির সৃষ্টি হয়েছে।
"ভগবান বিষ্ণু" কাশ্যপ ও অদিতির ছেলে "বামন অবতার" রুপে এসেছিলেন।

নমঃশূদ্ররা সবাই কি কাশ্যপ গোত্রের হয়?

হ্যা, নমঃশূদ্ররা সবাই কাশ্যপ গোত্রের হয়, কারণ কাশ্যপ মুনির পুত্র নমস্ মুনি গোষ্ঠীর সন্তান বলে নমঃশূদ্র কথাটা এসেছে। ফলস্বরুপ, বংশানুক্রমিক নমঃশূদ্ররা কাশ্যপ গোত্রের অন্তর্গত।

অত্রিসংহিতাতে বলা হয়েছে :
" জন্মনা জায়তে শূদ্রঃ, সংস্কারার্দ্বিজ উচ্যতে।
বেদপাঠো ভবেদ্ বিপ্রো, ব্রহ্ম জানাতি ব্রাহ্মণঃ। "

অর্থাৎ, জন্মগতসূত্রে সকলেই শূদ্র হয়ে থাকেন, সংস্কারের দ্বারা অর্জিত হয় দ্বিজ এবং যারা বেদপাঠ করে এবং ব্রহ্মাকে জানে, তারাই হচ্ছে প্রকৃত ব্রাহ্মণ।

কাজেই জন্মের দ্বারা সকলেই শূদ্র আর সংস্কারের মাধ্যমে হওয়া যায় দ্বিজ এবং ব্রহ্মজ্ঞান সম্পূর্ণ হলে তবেই সে ব্রাহ্মণ হবে। কিন্তু সেই নিয়মকে কোনোরুপ তোয়াক্কা না করে পরবর্তীতে জন্মসূত্রেই তারা ব্রাহ্মণ হয়ে আসছে এবং সকলের গোষ্ঠীর ভাগ্য এই ভাবেই নির্ধারিত হয়ে চলেছে।

কথিত আছে যে, ঋষি কাশ্যপের পুত্র নমস্, তাঁর নিজ পত্নী সুলোচনাকে অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় রেখে কঠোর তপস্যায় বেড়িয়ে পড়েন এবং সুদীর্ঘ চৌদ্দ বছর তপস্যা সম্পন্ন করে তিনি গৃহে ফিরে আসেন। কিন্তু, এরমধ্যে তাঁর পত্নী দুই পুত্রের জন্মদান করে মারা যান। [কীর্তিবান ও ঊরুবাণ ছিল পুত্রদ্বয়ের নাম, মাতা মারা যাওয়ায় যমজ পুত্রদ্বয় মাতৃহীন হয়ে পড়ে।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর যখন নমস্ মুনি ফিরে আসেন, তখন পুত্রদের দীক্ষাদানের জন্য বিভিন্ন দীক্ষাদাতার সন্ধান করেন। কিন্তু কেউই তাদের দীক্ষা দিলেন না কারণ বিগত ১৪ বছর তারা কোনো দিক্ষা গ্রহণ করেনি। এরপর উক্ত পুত্রদ্বয় ভাগ্যাের সন্ধ্যানে দেশ-দেশান্তরে ঘুরতে লাগলো এবং একসময় শ্রীমন্ত নামে এক শূদ্র রাজা এই পুত্রদ্বয়কে দেখন এবং তাদের রূপে মুগ্ধ হন, ফলস্বরুপ তাদের গ্রহণ করলেন। তাদের দু'জনের সাথে রাজার প্রাণের চেয়েও প্রিয় দুই কন্যাকে (শিপিকা ও সপত্রিকা) দান করলেন।

একারণেই দীক্ষা না পেলেও দশ দিনেই শৌচীর সমাপ্তি হয় নমঃশূদ্রদের ব্রাহ্মণের মতো।

[সূত্র : "শক্তিসঙ্গম তন্ত্র" গ্রন্থের ৬৪ টি অধ্যায়ের মধ্যে "প্রাণতোষী" অধ্যায়ে "হর - পার্বতী সঙ্কল্প" অংশ।]
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url