চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ইতিহাস, উচ্চতা, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য

চন্দ্রনাথ পাহাড়
চিত্র: চন্দ্রনাথ পাহাড়

চন্দ্রনাথ পাহাড় পরিচিতি:

এই পাহাড়টি হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ, মূলত এটি হিমালয়ের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ। হিমালয়ের দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক ঘুরে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যের মধ্য দিয়ে ফেনী নদী পার হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পাহাড়টি চট্টগ্রামের সবচেয়ে উচু স্থান। ফেনী নদী থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত পাহাড়টির দৈর্ঘ প্রায় ৭০ কিলোমিটার। পাহাড়টির পাদদেশে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা কত?

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা: ১০২০ ফুট বা, ৩১০ মিটার (প্রায়)। রাজবাড়ি অঞ্চলে পাহাড়টির যে অংশ রয়েছে তার উচ্চতা প্রায় ৯০০ ফুট এবং সাজিঢালার উচ্চতা ৮০১ ফুট। চট্টগ্রাম শহরের দিকে আগালে পাহাড়টির উচ্চতা ক্রমেই কমতে শুরু করে এবং শহরের কাছাকাছি এসে উচ্চতা অনেক কমে এসেছে যেমন শহরের উপকন্ঠে উচ্চতা ২৮০ ফুট (বাটালি হিল) এবং সামান্য উত্তরে ২৯৮ ফুট উঁচু (নঙ্গরখানা)।

ঝর্ণা ও প্রস্রবণ

পাহাড়ে যাবার পথে একটি ঝর্ণা দেখা যায় এবং ঝর্ণাটির পাশ দিয়েই পাহাড়ে উঠার জন্য দুইটি পথ রয়েছে। ডানদিকের পথে সিড়ি রয়েছে এবং বাম দিকের পথ পাহাড়ি পদ্ধতিতে তৈরি করা পাহাড়ি পথ। এই ঝর্ণা ছাড়াও পাহাড়টিতে আরো অনেকগুলো ঝর্ণা রয়েছে। যেমন মীরসরাই অংশে রয়েছে খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, বোয়ালিয়া, হরিণমারা, হাটুভাঙ্গা, বাঘবিয়ানী, অমরমানিক্য প্রভৃতি। পাহাড়টিতে "সহস্রধারা" এবং "সুপ্তধারা" নামে দুটি বড় আকারের জলপ্রপাত রয়েছে, এছাড়াও আরো অনেক ছোট ও মাঝারি মাপের জলপ্রপাত আছে। পাহাড়ের কোল ঘেসে বেশ কয়েকটি ঝর্ণা বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। মহামায়া ড্যামে নির্মিত হয়েছে একটি কৃত্রিম লেক, যা বর্তমানে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক। এছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশে মনোমুদ্ধকর "নীলাম্বর হ্রদ" রয়েছে।

পাহাড়ের চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দির

পাহাড়টির চূড়ায় রয়েছে চন্দ্রনাথ মন্দির, একারণে প্রতি বছর প্রচুর হিন্দুধর্মালম্বী মহাশিবরাত্রি উপলক্ষ্যে চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির আসেন। উক্ত মন্দিরের পাশেই একটি ছোট টং দোকান রয়েছে, যেখানে পূজা দেয়ার যাবতীয় উকরণ এবং হালকা খাবার পাওয়া যায়। জনশ্রুতিতে জানা যায়, নেপালের কোনো এক রাজা ঘুমের মধ্যে পাঁচ স্থানে শিব মন্দির স্থাপনের আদেশ পান। এরপর তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি শিব মন্দির স্থাপন করেন, যার মধ্যে চন্দ্রনাথ মন্দির একটি [বি.দ্র: এটি শুধুমাত্র লোককথা, সত্য কিনা তা নিশ্চিত নয়]। মন্দিরটি হিন্দুদের ধর্মীয় উপাসনালয় হলেও বিভিন্ন ধর্মের মানুষ পাহাড়ে ঘুরতে এসে মন্দিন দেখে যান।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে কীভাবে যাবেন?

  • ঢাকার সায়দাবাদ থেকে এসি এবং নন এসি উভয় ধরণের বাসে সীতাকুণ্ডে আসা যাবে।
  • ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ডে/ চট্টগ্রামে আসার জন্য ইন্টারসিটি ট্রেন রয়েছে, চাইলে ট্রেনেও আসতে পারবেন খুব সহজেই। রাত ১১ টার ট্রেনে উঠলে ঢাকা কমলাপুর থেকে আসতে সকাল ৬টা বা ৭টা বাজবে। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো সরাসরি চট্টগ্রাম স্টেশনে থামে তবে শিবচর্তুদশী মেলার সময় সীতাকুণ্ডে থেমে থাকে।
  • এরপর সীতাকুণ্ড বাজারে সিএনজি এবং বেবি পাওয়া যায়, সিএনজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা ভাড়া নিয়ে থাকে জনপ্রতি। এক থেকে দের ঘন্টার মধ্যেই চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে পারবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url