মাধবীলতা ফুল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

মাধবীলতা ফুল
মাধবীলতা ফুল
মাধুবিলতা ফুলের অনেকগুলো নাম রয়েছে যেমন- কামী, মণ্ডপ, পুষ্পেন্দ্র, অতিমুক্ত, অভীষ্টগন্ধক, বিমুক্ত, কামুক ও ভ্রমরোৎসব। মাধুবিলতা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হল Hiptage benghalensis । এই নাম গুলো তার ভাব প্রকাশে ব্যবহার করা হয় এবং এটি একটি দেশি ফুল তবে বর্তমানে এই লতা গাছটি প্রায় দুষ্প্রাপ্য। এক সময় "পুণ্ড্রক" দেশে (ময়মনসিংহে) প্রচুর মাধবীলতা পাওয়া যেত, যে কারনে এর আরেক নাম "পুণ্ড্রক"। মাধুবিলতা ফুল দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, ফিলিপাইন ও ভারতের উদ্ভিদ। পাতায় আচ্ছাদিত লতা দেখতে খুবই সুন্দর বলে প্রাচীনকালে মাধুবিলতা দিয়ে কুঞ্জ, মণ্ডপ ইত্যাদি তৈরির প্রচলন ছিল।

মাধুবিলতা বৃক্ষারোহী লতা ও দীর্ঘজীবী ফুল গাছ। যার ডালগুলো ছোট ছোট এবং ঝোপালো এবং ১৫-২০ ফুট অনায়াসে বেড়ে উঠতে পারে। বহুবছরের পুরনো মাধুবিলতার মূল লতাটি ধীরে ধীরে বেশ মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। ডাল দুই থেকে তিন বছর পরপর কাটতে হয়, এরপর লতা যত বেশি বাড়তে থাকে তত বেশি নতুন নতুন ডালপালা গজায় ও ফুল বেশি ফোটে। গাছের মোটা মোটা ডালের ছাল মেটে রঙের হয় এবং ভেতরের কাঠ লালচ হয়। পাতা বিপরীতমুখী, আয়তকার, বোটার দিক থেকে আগা ক্রমশ সরু, সাধারণত ৪ - ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। কিছুটা চাঁপা ফুলের পাতার মত দেখতে। বাগানের শোভা বাড়ানোর জন্য যত্ন করে এই গাছটি লাগানো হয়।

মাধবীলতা বসন্ত কালের ফুল হলেও, গ্রীষ্মে কালের শুরুতেও গাছে ফুল ফুটতে দেখা যায়, কখনো কখনো বর্ষাকাল পর্যন্ত ফুল থাকে। মাধবীলতা ফুল উভলিঙ্গ, গুচ্ছবদ্ধ ও বিন্যাস সুসংবদ্ধ এবং মুকুলগুলো সূক্ষ্ম রোমে ভরপুর। ফুল সাদা রঙের থেকে হালকা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে, এর ৫ টি পাপড়ি যার কিনারা চিরুনির মতো কাঁটা, চারটি পাপড়ির আকৃতির সমান হলেও ৫ম পাপড়িটি একটু ছোট আকৃতির এবং গোড়ার দিক হলদেটে হয়। পাপড়ি গুলি ১-২ সেমি লম্বা ও ১-১.৫ সেমি চওড়া ফুলগুলো দেখতে তিল ফুলের মতো এবং খুব সুগন্ধি। 

মাধবীলতা ফুল থেকে ফল হয়, ফল ৩টি পক্ষযুক্ত রোমশ। ফলের এমন গড়নের জন্য কেউ কেউ একে মদনমাস্তা ও হেলিকপ্টার ফুল বলেও ডাকে। এর এক একটি ফলে ২-৩ টি করে গোলাকার বীজ থাকে। বীজ থেকে সহজেই চারা হয়, এমনকি ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে দিলেও গাছ পাওয়া যায়। মাধবীলতা অযত্নেও বেড়ে উঠতে পারে।

মাধবীলতার বহু ভেষজ গুণ রয়েছ যেমন-

  • মাধবীলতার পাতা চর্ম রোগে ব্যবহার করা হয়।
  • মাধবীলতার পাতার রস কুষ্ঠ রোগে ও খোস-পাঁচড়ার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • মাধবীলতার পাতা ও ডালের রস হাঁপানী ও পুরনো বাত ব্যাথার জন্য খুবি উপকারি।
  • মাধবীলতার শুকনো ছালের গুড়ো বিষাক্ত পোকার দ্বারা তৈরি ঘা সারিয়ে তোলে।

মাধবীলতার বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস:

  • Kingdom -  Plantae
  • Subkingdom -  Tracheobionta
  • Superdivision -  Spermatophyta
  • Division -  Magnoliophyta
  • Class -  Magnoliopsida
  • Subclass -  Rosidae
  • Order -  Polygalales
  • Family -  Malpighiaceae
  • Genus -  Hiptage
  • Species -  Hiptage benghalensis
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url