নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে কোন রোগীদের সেবা দেওয়া হয়? বিস্তারিত পড়ুন...

নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার রোগীর সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগি দেখা হয়ে থাকে। আউটডোরে সেবা প্রদান সম্ভব নয় শুধু এমন রোগিদেরি ইনডোরে ভর্তি করা হয়ে থাকে।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫০০ বেড রয়েছে। নতুন করে আরো ৫০০ বেড যুক্ত করার কাজ চলমান রয়েছে, যা খুব দ্রুতই উদ্ভোদন হবে। এই হাসপাতালটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে কোনো রোগীর এ্যাটেন্ডেন্সকে থাকতে হয়না। দায়িত্বরত ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়রাই সর্বদা রোগির সকল রকম দেখভাল ও পরিচর্যা করে থাকেন। এছাড়াও অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের ন্যায় এখানে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাপট বা হয়রানি পোহাতে হয়না কোনো রোগিকে।
নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে মানুষের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা করা হয়। এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা প্রদান করেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। চলুন দেখি, নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে কোন রোগীদের সেবা দেওয়া হয়।
নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে যে সকল রোগী সেবা নিয়ে থাকেন:
১. মস্তিষ্কের রোগীরা
নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে মস্তিষ্কের রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। এখানে বিভিন্ন মস্তিষ্কের রোগ যেমন:
- মাইগ্রেন: এটি এক ধরনের মাথাব্যথা। মাইগ্রেন হলে সাধারণত মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা হয়।
- এপিলেপসি: এই রোগে রোগীর অস্থিরতা দেখা দেয়। কিছু সময়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
- স্ট্রোক: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে স্ট্রোক হয়।
- মস্তিষ্কের টিউমার: এটি মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধির ফলে হয়।
২. স্নায়ু রোগীরা
নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে স্নায়ু রোগের জন্যও রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। স্নায়ু সম্পর্কিত কিছু রোগ হলো:
- পার্কিনসন্স রোগ: এটি একটি স্নায়বিক রোগ। এতে রোগীর শরীরের আন্দোলনে সমস্যা হয়।
- মায়স্থেনিয়া গ্রাভিস: এই রোগে রোগীর পেশির শক্তি কমে যায়।
- গায়ান ব্যারি সিন্ড্রোম: এটি স্নায়ুর প্রদাহজনিত একটি রোগ।
৩. মানসিক রোগীরা
নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে কিছু মানসিক রোগের চিকিৎসাও করা হয়। মানসিক রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ডিপ্রেশন: এটি একটি মানসিক অবস্থার নাম। এতে মানুষের মন খারাপ থাকে।
- অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার: এতে মানুষের অতিরিক্ত চিন্তা এবং ভয় হয়।
- স্কিজোফ্রেনিয়া: এটি একটি গুরুতর মানসিক রোগ। এতে মানুষের বাস্তবতা বুঝতে সমস্যা হয়।
৪. শিশু রোগীরা
শিশুদের জন্যও নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে বিশেষ সেবা দেওয়া হয়। শিশুদের মধ্যে কিছু সাধারণ রোগ হলো:
- অটিজম: এটি শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের সমস্যা সৃষ্টি করে।
- এডিএইচডি: এটিতে শিশুদের মনোযোগ দেওয়ার সমস্যা হয়।
- সিজার: কিছু শিশুর সিজার হতে পারে।
হাসপাতালের জরুরী চিকিৎসা
নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে জরুরি অবস্থায়ও রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। যদি কোন রোগীর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। এছাড়াও, স্নায়ুতে আঘাত পাওয়া রোগীদেরও দ্রুত সেবা দেওয়া হয়।
চিকিৎসার পদ্ধতি
নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
- মেডিসিন: অনেক রোগের জন্য ঔষধ দেওয়া হয়।
- থেরাপি: কিছু রোগের ক্ষেত্রে থেরাপি দেওয়া হয়। এতে রোগীরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে উন্নতি করে।
- সার্জারি: গুরুতর রোগীদের জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
পুনর্বাসন সেবা
রোগীদের সেবা দেওয়ার পর তাদের পুনর্বাসনের জন্যও ব্যবস্থা আছে। নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি এবং স্পিচ থেরাপির ব্যবস্থা আছে। এই থেরাপিগুলি রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করে।
রোগীর পরিবারের সেবা
নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল রোগীর পরিবারকেও সেবা দেয়। পরিবারের সদস্যদের রোগ সম্পর্কে জানানো হয় এবং তারা কিভাবে রোগীর সেবা করতে পারেন, তা শেখানো হয়। এতে রোগীর চিকিৎসা প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়।
গবেষণা
নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে রোগের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করা হয়। এখানে গবেষকরা নতুন ঔষধ এবং থেরাপি নিয়ে কাজ করেন। এই গবেষণার মাধ্যমে স্নায়ুবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
সচেতনতা কর্মসূচি
নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল নিয়মিত সচেতনতা কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে জনগণকে স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের রোগ সম্পর্কে জানানো হয়। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হয়।
নিউরো সাইন্স হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী এসে থাকেন স্ট্রোকের সমস্যা নিয়ে। কয়েক বছর পূর্বেও এদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যেত হৃদরোগে। কিন্তু বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যান স্ট্রোকে। গবেষণায় দেখা যায় প্রতি হাজারে ১১.৩৯ জন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এছাড়াও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন এমন রোগিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পঙ্গু হয়েছেন স্ট্রোকের কারণে।
নিউরো সাইন্স হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানান যদি কোনো স্ট্রোকের রোগিকে সাড়ে ৪ ঘন্টা থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে আনা সম্ভব হয় তাহলে তাকে অ্যান্টিপ্লেজ ইনজেকশন প্রদান করা হয়ে থাকে। রোগির সমস্যা বুঝে ইনজেকশনটি দেয়া সম্ভব হলে রোগির পঙ্গুত্ব রোধ করা সম্ভব হয় অনেকাংশে।
উপসংহার
নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি মানুষের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু সম্পর্কিত রোগের চিকিৎসা করে। এখানে রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং নার্সরা কাজ করেন। নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল রোগীদের দ্রুত সুস্থ করতে এবং তাদের জীবনে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমাকে জানাবেন আগামী রবিবারে স্ট্রোকে জন্য কোন ডা: আছে প্লিজ?