চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে? পক্স হলে কি করনীয়?

চিকেন পক্স হলে করণীয় কি

গরমের শুরুতে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বাসা বাঁধে। চিকেন পক্স (জলবসন্ত) একটি ভাইরাস জনিত রোগ, যে কারণে এই সময়টায় চিকেন পক্সের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। চিকেন পক্স নিয়ে গ্রাম অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা আছে। সেসব কথায় কান না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উত্তম হবে।

ভাইরাস সংক্রমণের কারণে শুরুতে শরীর ম্যাজম্যাজ করবে, জ্বর হবে, সারা শরীরে হালকা ব্যাথা অনুভব হবে এবং ছোট ছোট র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাবে। সাধারণত এই ফুসকুড়িগুলোর মুখে জল থাকতে দেখা যায়। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ যে কারণে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে বেশ কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। আজকে আমরা চিকেন পক্স হলে করণীয় কি এবং চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করব।

চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে ?

চিকেন পক্স হলে আবশ্যয় গোসল করা যাবে। এসময় নিয়মিত গোসল করা খুবই জরুরি। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পানিতে গোসল করবেন না হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করবেন। নিমপাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করবেন কারণ, নিম পাতায় "অ্যান্টিসেপটিক" নামক একটি উপাদান থাকে যা পক্স নির্মূল করতে সাহায্য করে। গোসল শেষে পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে আলতো করে গা মুছতে হবে (চাপ দিয়ে দিয়ে) এবং ফুসকুড়িগুলো যেন ফেটে না যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

পক্স হলে কি করনীয়:

  1. জলবসন্ত বা চিকেন পক্স হলে রোগীকে আলাদা বিছানায় রাখতে হবে (সম্ভব হলে আলাদা ঘরে রাখবেন)।
  2. রোগীকে ঘরের বাইরে যেতে দিবেন না কারণ বাইরের আবহাওয়ায় "ফুসকুড়িগুলো" শুকাতে সময় বেশি লাগতে পারে।
  3. রোগীর জামাকাপড়, থালা-বাসন বা তিনি স্পর্শ করে এমন সব জিনিস বাড়ির অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখবেন।
  4. নিয়মিত গোসল করা খুবি জরুরি। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে গোসল করবেন না, কুসুম গরম পানি ব্যবহার করবেন।
  5. নিমপাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে আরো বেশি উপকার পাওয়া যায়। কারণ নিম পাতার "অ্যান্টিসেপটিক" নামক একটি উপাদান থাকে যা পক্স নির্মূল করতে সাহায্য করে (গোসলের পাশাপাশি নিম পাতার রস খেলেও উপকার পাবেন)।
  6. এসময় সাধারণত বিশেষ কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তবে জ্বর বা শরীর ব্যাথার জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারেন (শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে)।
  7. সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিন দুই বার জামাকাপড় বদলানো উচিত এতে ত্বক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে।
  8. সুতি কাপড়ের পোশাক ছাড়া অন্য কাপড়ের পোশাক পরবেন না (অন্যথায় অস্বস্তি বা চুলকানি বেড়ে যেতে পারে)।
  9. চিকেন পক্স হলে শরীরে চুলকানি হয় তবে কখনোই নখ দিয়ে চুলকানো যাবে না। চুলকানি কমাতে "ক্যালামাইন লোশন বা অলিভ অয়েল তেল" ব্যবহার করতে পারেন।
  10. চর্বিজাতীয় খাবার যেমন পনির, মাখন, বাদাম এবং চকলেট জাতীয় খাবার খাবেন না। এসব খাবারে অতিরিক্ত ফ্যাট থাকে যা চিকেন পক্সের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে।
  11. অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। কারণ পক্স হলে মুখে ও জিবেও ফুসকুড়ি হয় তাই সহজপাচ্য ও ঠান্ডা খাবার খেতে হবে যেমন; সেদ্ধ শাক-সবজি, দই, ডাবের পানি ইত্যাদি।
  12. চিনাবাদাম, আখরোট, কিশমিশের মতো খাবার এমনিতে শরীরের জন্য খুবি ভালো তবে চিকেন পক্সের সময় একেবারেই খাওয়া যাবে না।। কারণ এতে "অর্গিনিন" নামের একধরনের অ্যামাইনো এ্যাসিড থাকে, যা চিকেন পক্সের জীবাণুর বংশবিস্তার করে।
  13. এ সময় রোগীকে বেশি পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল ও ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়াবেন। মুখে স্বাদ আনার জন্য পাতলা করে স্যুপ খাওয়াতে পারেন।
  14. ইলিশ ও চিংড়ি–জাতীয় মাছ ছাড়া সব ধরনের মাছের পাতলা ঝোল খেতে পারবে।
  15. শরীরে পুষ্টির অভাব পূরণ করতে বিভিন্ন ধরনের ফলের রস খাওয়াতে পারেন। তবে লেবুর রস খাওয়াবেন না, কারণ এতে সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে যা মুখ ও জিহ্বার ক্ষতস্থানে প্রদাহের কারণ হতে পারে।
  16. পূর্বে রোগীর শরীরে অ্যালার্জি বা চুলকানি হতো এমন খাবার খাওয়াবেন না।
  17. এসময় নিয়ম মেনে চলাটা খুবই জরুরি। ভয় পাবার কোনো কারণ নেই, নিয়ম মেনে চললে ১০-১৫ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়।
ত্বকে ছত্রাক, ভাইরাস বা যেকোনো ধরনের সংক্রমণের আক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মলম বা ওষুধ ব্যবহার করুন। আশা করছি চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া উচিত বা চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া যাবে না সে সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছেন। এই নিয়ম গুলো মেনে চলতে পারলে তেমন সমস্যা হবে না।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url