বায়না দলিল বাতিল করার নিয়ম [ আপডেট ২০২৩]
যে কোনো সম্পত্তির বায়না দলিল বাতিল করার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম এবং প্রক্রিয়া রয়েছে। সাধারণত বিক্রেতা বায়নার টাকা বুঝে না পেলে বা সময় পার হয়ে গেলে বায়না বাতিল করার প্রয়োজন হয়। আবার ক্রেতা বায়নার সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করতে রাজি থাকলেও বিক্রেতা বায়নার চেয়ে বেশি দাবী করলে অনেকে বায়না বাতিল করতে চান। এছাড়াও আরো অনেক কারণে বায়নাচুক্তি বাতিল করার প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য তিনভাবে বায়না দলিল বাতিল করা যেতে পারে। যথা:
বায়না দলিল বাতিল করার নিয়ম
ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই রাজি থাকলে:
- পূর্বে যেই সাব রেজিস্ট্রি অফিসে বায়নানামা করা হয়েছে, সেই অফিসে যেতে হবে।
- এরপর নির্দিষ্ট ও সুষ্পষ্ট কারণ দেখিয়ে উভয় পক্ষের সম্মতিতে বায়নানামা বাতিল করা হচ্ছে এই মর্মে একটি বায়নানামা বাতিল বা রহিতকরণ দলিল করতে হবে।
- পূর্বের দলিলে যেভাবে সিগনাচার ছিল সেভাবেই নতুন দলিলে স্বাক্ষর দিতে হবে উভয়কে।
- পূর্বের দলিলে যারা সাক্ষী ছিলেন তাদেরকেই বায়নানামা বাতিলের দলিলে সাক্ষী রাখা উত্তম হবে, সম্বব না হলে অন্য কাউকে রাখা যেতে পারে।
- সর্বশেষ রেজিস্টার অফিসার উভয় পক্ষের স্বশরীরে উপস্থিত অবস্থায় বায়নানামা বাতিল দলিল স্বাক্ষর করবেন।
ক্রেতা রাজী না থাকলে:
বায়নানামা চুক্তির মেয়াদ যতদিন থাকবে ততদিন উভয়পক্ষের সম্মতি ছাড়া বায়না নামা বাতিল করা যাবেনা এবং কোনো প্রকার আইনি সহায়তাও পাবেননা। যদি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এবং ক্রেতা টাকাও দিচ্ছেনা আবার চুক্তি বাতিল করতেও রাজি হচ্ছেনা অথবা আরো সময় চাচ্ছে কিন্তু বিক্রেতা অতিরিক্ত কোনো সময় দিতে রাজিনা, এমন ক্ষেত্রে বায়না দলিল বাতিল করতে নিচের নিয়ম ফলো করবেন।
- প্রথমে একজন উকিলের কাছে গিয়ে উকিল নোটিশ পাঠাতে হবে ক্রেতা বরাবর।
- উকিল নোটিশে কয়েকদিনের সময় দিতে হবে টাকা পরিশোধের জন্য এবং নোটিশে উল্লেখ থাকতে হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে আপনি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
- এর পর যদি ক্রেতা উকিল নোটিশে দেয়া সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে তাহলে এখানেই কাজ শেষ।
- তবে যদি টাকা পরিশোধ না করে তাহলে আদালতে বায়নানামা বাতিলের মামলা করতে হবে।
- আদালত সবকিছু দেখে সন্তুষ্ট হলে বায়না দলিল বাতিলের রায় দেবেন।
- এসময় আপনি ক্ষতিপূরণ হিসেবে বায়নার টাকা দাবি করলে আদালত আপনাকে বায়নার টাকা রেখে দেওয়ার অনুমতি দিতে পারেন।
বিক্রেতা রাজী না থাকলে
অনেক সময় দেখা যায় বায়নার সময় ২ বছর দেয়া হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ সম্পদের দাম অনেক বেড়ে গেল। এমন অবস্থায় অনেক বিক্রেতা দাম বেশি চেয়ে থাকেন। কিন্তু ক্রেতা রাজি না থাকায় বায়না চুক্তি সম্পন্ন হয়না। এমতাবস্থায় উভয় পক্ষই আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন।
- যদি ক্রেতা পূর্বের বায়নার শর্ত সাপেক্ষে বায়নার সম্পদ পেতে চান তাহলে আদালতের দারস্থ হলে সম্ভাবনা আছে আদালত তার পক্ষেই রায় দেবে।
- তবে বিক্রেতা যদি যথাযথ কারণ দেখাতে পারেন এবং আদালতের কাছে তার যুক্তি যথার্থ মনে হয় সেক্ষেত্রে ক্রেতার সম্মতিতে বায়না দলিল বাতিল বা সংশোধনের রায় দিতে পারেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় বায়না দলিলের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মামলা করলে বায়না দলিল বাতিল হয়না।
- আবার অনেকে বায়না দলিলে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দেওয়া থাকেনা, এক্ষেত্রে আদালত সবকিছু বিবেচনা করে রায় দিয়ে থাকেন।