জারা ঘাস চাষ পদ্ধতি | জারা ঘাস লাগানোর নিয়ম
জারা ঘাস চাষ পদ্ধতি
জারা ঘাস চাষ পদ্ধতি অন্য সব হাইব্রিড ঘাস চাষের ন্যায় একইভাবে করতে পারবেন। তবে বাংলাদেশে জারা ঘাস ১ চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে। একারণে কৃষি কর্মকর্তাগণ চীনে যে পদ্ধতিতে এই ঘাস চাষ করে থাকে অনেকটা সেভাবেই সাধারণ খামারিদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তাই আমরাও এই পোস্টের মাধ্যমে সরাসরি চীনের খামারিদের পদ্ধতি এবং কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শের আলোকে উপস্থাপন করেছি।
জারা ঘাস লাগানোর নিয়ম
- প্রথমত জমির মাটি ভাল করে চাষ দিতে হবে।
- ভালভাবে আগাছামুক্ত করতে হবে।
- জমিতে উইপোকা থাকলে কীটনাশক ব্যাবহার করে উইপোকা দমন করে নিতে হবে।
- এরপর বিঘা প্রতি ২ থেকে ৩ টন গোবর দিতে হবে। গবর দিতে না পারলে অন্য কোনো জৈব সার ব্যাবহার করবেন। তবে গোবর সর্বোত্তম হবে।
- এরপর প্রতি চারফিট দুরে দুরে ঘাস লাগাতে হবে।
- লম্বা সুতা ধরে সারি সারি করে লাগাতে হবে, এতে পরিচর্যা করা সহজ হবে।
- ঘাসের গিট চারটি করে দিবেন, যদি ৪ ফিট দুরে দুরে রোপন করেন। এক্ষেত্রে ২ গিট করে ২টা পাশাপাশি সমান্তরালে ২ ইঞ্চি ফাকা রেখে লাগাবেন। অথবা ৪ গিটের কাটিং একটি করে মাটিতে সমান্তরালে লাগাবেন।
- আর যদি ১/২টি গিট লাগান তবে ২/২.৫ ফিট অন্তর অন্তর জারা ঘাস রোপন করতে পারবেন।
- ২ ইঞ্চি মাটির গভীরে রোপন করতে হবে।
উপরের চিত্রে ১ গিটের ২টি কাটিং পাশাপাশি সমান্তরালে ২ ইঞ্চি ফাঁক রেখে রোপন করা হয়েছে। তবে উপরের ফটোতে কাটিং এর মাথা উপরে দেখা যাচ্ছে এটা দেখে বিভ্রান্ত হবেননা, অবশ্যই মাটির নিচে নূন্যতম ২ ইঞ্চি গভিরে রোপন করতে হবে। বুঝার সুবিধার্থে উপরের ফটোটি দেয়া হয়েছে।
ঘাস লাগানোর পরবর্তী পরিচর্যা
- নূন্যতম ১৫ দিন পরপর অর্থাৎ মাসে ২ বার করে পানি দিতে হবে, যদি জমির মাটি শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
- ভেজা মাটি হলে পানি দেওয়ার প্রয়োজন হবেনা।
- ঘাস কাটার সময় খুব বেশি বড় মুথা রাখা যাবেনা। কারণ মুথা বড় রাখলে নতুন ঘাস মাটির নিচ থেকে বের না হয়ে মাটির উপর থেকে মুথার গা থেকে বের হয়। এমনটি হলে ঘাসের ফলন কমে যাবে।
- প্রতিবার ঘাস কাটার পর-পরি গোবর/ গোবর সার ছিটাবেন। এই ঘাস চাষে বেশি পরিমাণে গোবর দিলে অনেক ভাল ফলন হবে। চীনের বিভিন্ন খামারে জারা ঘাস চাষে শুধুমাত্র গোবর ব্যাবহৃত হয়।
- প্রতিবার ঘাস কাটার পর নতুন ঘাসের মাথা ৪/৫ ইঞ্চি লম্বা হয়ে উঠলে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পরিমাণে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করবেন, এতে ঘাস দ্রুত বেড়ে উঠবে।
- প্রতিবার ঘাস কাটার পর, অন্যান্য আগাছা ঘাস, দুবড়া প্রভৃতি পরিষ্কার করে দিতে হবে। তাহলে ঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারবে।
- অনেকে একসাথে দুই/তিন প্রজাতির ঘাস চাষ করেন। জারা ঘাস চাষের ক্ষেত্রে এটা করলে আশানুরুপ ফল পাবেননা। বরং লসের সম্মুখিন হতে পারেন।
কি পরিমাণ জারা ঘাস উৎপন্ন হয়?
বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ টন ঘাস হবে প্রথমবার। এরপর ২য় এবং ৩য় ধাপে আরো বাড়বে। বছরে বিঘা প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টন ঘাস উৎপন্ন হয়ে থাকে। ফলন খুব ভাল হলে ৩৫০ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
মাটি
বেলে, দোআঁশ, এটেল যেকোন মাটিতে জারা ঘাস চাষ করা যাবে।
- পাহাড়ি এলাকা বা ঢালু জমিতে চাষ করতে পারবেন। মূলত চীনে পাহাড়ী এলাকাতেই এই ঘাস বেশি চাষ হয়ে থাকে।
- স্যাঁতসেঁতে ভেজা জমিতেও চাষ করতে পারবেন।
- বর্ষাকালে সর্বোচ্চ ১ মাস হাটু পানি জমে থাকে এমন জমিতে এই ঘাস চাষ করতে পারবেন। তবে ১ মাসের অধিক সময় পানি জমে, এমন জমিতে চাষ করা যাবেনা।
জারা ঘাসের উপকারীতা:
প্রথমবার চারা থেকে ঘাস হতে ২ মাস সময় লাগে, এরপর থেকে প্রতি মাসে একবার করে কাটতে হয়।
- এই ঘাস যখন গাভীকে খাওয়াবেন তখন দানাদার খাবার অর্ধেক পরিমাণে দিলেই চলবে।
- প্রটিনের পরিমাণ ১৬ থেকে ২০% পর্সন্ত।
- কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ২৮ থেকে ৩০%।
- এই ঘাস খুবই সফ্ট হয়, কোনো আঁশ, কাটা বা খসখসে ভাব থাকেনা। একারণে গরু খুব আয়েশ করে খেতে পারে।
- এই ঘাস সাইলেস করা যায়।
- এই ঘাসে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ খুব বেশি হওয়ায় চিটাগুড় দেওয়ার প্রয়োজন হয়না।
- এই ঘাস দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায় কাটার পর।