শ্রী কৃষ্ণের জন্ম তারিখ কত? কৃষ্ণের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল? কৃষ্ণ কত বছর বেঁচে ছিলেন?

কৃষ্ণের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল

শ্রী কৃষ্ণের জন্ম তারিখ কত?

শাস্ত্রীয় বিবরণ এবং জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে শ্রী কৃষ্ণের জন্ম ১৮ জুলাই ৩২২৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের হয়েছিল। শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিনটি "জন্মাষ্টমী" নামে পালন করা হয়।

বাসুদেব এবং দেবকী দুজনেই যাদববংশীয় ছিলেন তাদের অষ্টম গর্ভের সন্তান "শ্রী কৃষ্ণ"। দেবকীর বড় ভাই কংস তাদের পিতা উগ্রসেনকে বন্দী করে সিংহাসন দখল করেন। আকাশবাণী/ দৈববানীর মাধ্যমে কংস জানতে পারেন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান তার মৃত্যুর কারণ হবে। দৈববানী শুনে তিনি বসুদেব ও দেবকীকে কারাগারে বন্দী করেন এবং তাদের প্রথম ছয় সন্তানকে হত্যা করেন কংস। দেবকীর সপ্তম গর্ভকে "রোহিণীর গর্ভে" প্রদান করেন ফলে জন্ম হয় বলরামের। এরপর এলো সেই শুভ দিন, যেদিন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান "শ্রীকৃষ্ণের" জন্ম হয়।

কৃষ্ণের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল?

কৃষ্ণের মৃত্যু হয়েছিল একজন শিকারীর ছোড়া তীর বিদ্ধ হয়ে। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

মহাভারতের গল্প/কাহিনী কম বেশি আমরা সকলেই জানি। কুরুবংশ ধ্বংস করে সিংহাসনে বসেন পাণ্ডবরা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ যেখানে শেষ সেখান থেকেই এই কাহিনির শুরু।

রাজমাতা গান্ধারী তার শতাধিক পুত্রকে যুদ্ধে হারিয়ে শোকে-দুঃখে প্রায় পাগলিনী হয়ে গিয়েছিলেন। তখন গান্ধারী কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেন যুদ্ধের ফলাফল কী হতে চলেছে তা জানা থাকা সত্ত্বেও তিনি কেন কুরুক্ষেত্রের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এড়াতে কোনো প্রচেষ্টা করেননি। গান্ধারী কৃষ্ণকে সরাসরি দায়ী করেন তার শত পুত্রের মৃত্যুর জন্য। নিঃসন্তান গান্ধারী প্রশ্ন করেন কেন তাঁর এতদিনের ধর্মনিষ্ঠার এই পুরষ্কার হবে। যেকারণে তিনি কৃষ্ণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, "যে প্রকারে আমার বংশের বিনাশ হয়েছে সেই প্রকারে তোমার চোখের সামনে তোমার যাদব বংশের বিনাশ হবে। পশুর ন্যায় সমস্ত যাদব একে আপরের রক্ত পান করবে আর বাছুরের ন্যায় সমস্ত যাদববালক কন্দন করবে, ওদের অশ্রু মুছে দেওয়ার কেউ থাকবেনা। যে প্রকারে আমার নগরী দুঃখে নিমজ্জিত সেই প্রকারেই তোমার নগরীও সমুদ্রে নিমজ্জিত হবে। সমস্ত নগরের স্বর্ণ ভবন সমুদ্রের গর্ভে নিমজ্জিত হবে। আর তুমি কোন জঙ্গলে একলা আসক্ত এক বৃদ্ধ পশুর ন্যায় এক শিকারীর হস্তে তীর বিদ্ধ হবে"।

তারপর নিজের রাজ্য দ্বারকায় ফিরে যান কৃষ্ণ। পুত্র সাম্ব ও স্ত্রী রুক্মীনিকে নিয়ে সুখে বাস করেন ৩৫ বছর। সমগ্র যাদব এমন শান্তিময় সুখে বসবাস করতে করতে তারা ভালোবাসা, মানবিকতা, নিয়ম-শৃঙ্খলা ও আদর্শ সবি ভুলে যান। রাজমাতা গান্ধারীর অভিশাপের দিন যত এগিয়ে আসতে থাকে, দ্বারকায় ততই অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে।

একদিন সপ্তঋষি দ্বারকায় আসেন কৃষ্ণ ও বলরামের সঙ্গে দেখা করতে। কৃষ্ণের ছেলে সাম্ব এবং তার বন্ধুরা তাদের সাথে একটু মজা করতে চায়। সাম্ব নারীর সাজে পেটে লোহার টুকরো বেঁধে গর্ভবতী নারী সেজে সপ্তঋষির সামনে আসেন। তখন ঋষিগণ তাদের দৈব ক্ষমতার মাধ্যমে গর্ভের সন্তান মেয়ে না ছেলে জানার চেষ্টা করে। পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ঋষিগণ সাম্বকে অভিশাপ দেন যে তোমার শরীরে যা বাঁধা আছে, তা এই যাদব বংশের ধ্বংসের কারণ হবে। পরের দিনই সাম্বর পেটে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয় এবং শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।

সাম্বর অসুস্থতার কথা শুনে কৃষ্ণ ও বলরাম তাকে দেখতে আসেন। তখন সপ্তর্ষির অভিশাপ সম্পর্কে জানতে পারে তারা এবং লোহার টুকরোটিও দেখতে পান সাম্বর পাশে। লোহার টুকরো গুঁড়ো করে "প্রভাস নদীর" জলে ভাসিয়ে দেবার নির্দেশ দেন। কিন্তু সবটা গুঁড়ো করলেও তার মধ্যে এক টুকরো লোহা থেকে যায়। লোহার গুঁড়ো " প্রভাস নদীতে" ভাসিয়ে দিলেও সেই এক টুকরো লোহা একটা মাছ গিলে ফেলে। সেই মাছ আবার স্থানীয় এক মৎস্যজীবীর জালে ধরা পড়ে। জেলে সেই মাছের পেটে একটি লোহার টুকরো খুজে পান এবং তা দিয়ে একটি হারপুন তৈরি করেন।

"প্রভাস নদীর" তীরে যাদব বংশীয়রা একদিন গান-বাজনা ও খানাপিনার জন্য একত্রিত হন। সকলে প্রচুর মদ্যপান করে নিজেদের মধ্যে গোলমালে জড়িয়ে পড়েন। গোলমাল থেকে হাতাহাতি, হাতাহাতি থেকে শুরু হয় ভয়ানক যুদ্ধ। ওই লোহার যে টুকরো গুঁড়ো করে নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা পাড়ে জমে বিশেষ ধরনের এক ঘাস জন্মায়। এই ঘাসের ফলক দিয়েই পরস্পর পরস্পরকে আক্রমণ করেন যাদবরা। আর একে একে প্রত্যেকের মৃত্যু হতে থাকে, সত্যি হয় গান্ধারীর অভিশাপ।

যাদব রাজবংশ শেষ হয়ে যাওয়ার পর শোকে দুঃখে একলা অসহায় হয়ে একটি গাছের ডালে বসেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তখন তার লাল পা দেখে শিকারী হরিণ ভেবে হারপুনটি ছোড়েন (এই হারপুন তৈরি করা হয়েছিল সেই লোহার টুকরো থেকে)। শিকারীর হস্তে তীর বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় শ্রীকৃষ্ণের।

পাণ্ডবরা যখন খবর শুনে দ্বারকায় পৌঁছে তখন সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। অতপর পাণ্ডবরা কৃষ্ণের অন্তেষ্টি ক্রিয়া শেষ করে এবং দ্বারকার সব মহিলা ও শিশুদের নিয়ে হস্তিনায় ফিরে যান।

কৃষ্ণ কত বছর বেঁচে ছিলেন?

কৃষ্ণ ১২৫ বছর বেঁচে ছিলেন। বিভিন্ন পুরাণ ও প্রাচীন গ্রন্থ মতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১২৫ বছর প্রকট লীলাবিলাস করেন। ১২৫ বছর ধরাধামে অবস্থান করে বৈকুন্ঠে গমন করেন। মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে তিনি ইহধাম ত্যাগ করে অন্তর্ধান করেন।

মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে খ্রিস্টপূর্ব ৩১০১ তে কৃষ্ণ ইহধাম ত্যাগ করেন। সেই দিন শুক্রবার ছিল, ওই দিন থেকেই কলিযুগের শুরু। কলির আবির্ভাব শ্রীকৃষ্ণের অর্ন্তধানের দিনই শুরু হয়। ১২৫ বছর শ্রীকৃষ্ণ জীবনলীলা করেছেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
Advertisement