সফলা একাদশী মাহাত্ম্য

সফলা একাদশী মাহাত্ম্য

পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে "সফলা একাদশী" বলা হয়। এই একাদশীর মাহাত্ম্য ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে যুধিষ্ঠির ও শ্রীকৃষ্ণের গল্পে বর্ণিত রয়েছে। যুধিষ্ঠির বললেন- হে কৃষ্ণ! পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি? মাহাত্ম্যই বা কি? এবং এই একাদশীর পূজ্যদেবতা কে? সে বিষয়ে আমার কৌতুহল নিবারণ করুন দয়া করে।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে মহারাজ! আমি আপনার কৌতুহলের কারণ বুঝতে পেরেছি তাই একাদশী বিষয়ে আপনাকে বলছি। পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে খুবই শুভ বলে মনে করা হয়, এই একাদশীর নাম "সফলা"। সফলা একাদশীর ব্রত নারায়ণ উৎসর্গ করা হয়। এই দিনে উপবাস করলে মনের সকল ইচ্ছা পূরণ হয় এবং জীবণে সুখ ও সমৃদ্ধির অভাব হয় না। হাজার বছর তপস্যায় যে ফল লাভ হয়, তা একমাত্র সফলা একাদশীতে রাত্রি জাগরণের ফলে অনায়াসে লাভ করা যায় এবং পরকালে মুক্তি লাভ হয়। সফলা একাদশীর মাহাত্ম্য নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

সফলা একাদশী মাহাত্ম্য:

প্রাচীন কালে প্রসিদ্ধ চম্পাবতী নগরে বাস করতেন মহিষ্মত নামক এক রাজা। তার ছিল চার পুত্র। তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র লুম্পক সব সময় মদ্যপান, পরস্ত্রীগমন সহ নানান পাপ কর্মে রত থাকতেন। এমনকি বৈষ্ণব, ব্রাহ্মণ ও দেবতাদের নিন্দা করতেন। পুত্রের এমন ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে "রাজা মহিষ্মত" লুম্পক রাজ্য থেকে বহিষ্কার করেন। পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পরিত্যক্ত হয়ে এক গভীর জঙ্গলে বসবাস করতে শুরু করলেন। সেখানে গিয়েও কখনো জীবহত্যা আবার কখনো চুরি করে জীবণ ধারণ করতে লাগলেন। সেই বনে অনেক বছরের পুরনো একটি বিশাল অশ্বত্থ গাছ ছিল। ভগবান শ্রী বাসুদেব সেখানে উপস্থিত থাকায় গাছটি দেবত্ব লাভ করে। পাপী লুম্পক সেই গাছের নিচেই বাস করতেন।

অনেক দিন পর, পৌষ মাসের দশমীর দিন এলে পূর্বজন্মের কিছু পুণ্যের কারণে ফল খেয়ে তার দিন কাটে এবং রাতে অসহ্য ঠাণ্ডায় ঘুমাতে পারেননি। পরেরদিন সকালে ঠান্ডার কারণে অচেতন হায়ে পড়ে থাকেন। অর্ধেক দিন কেটে যাওয়ার পর চেতনা ফিরলে ক্ষুধা নিবারণের জন্য জঙ্গল থেকে কিছু ফল সংগ্রহ করেন। সন্ধেবেলা হাতে ফল নিয়ে নিজের ভাগ্যকে দূষতে দূষতে ঈশ্বরকে স্মরণ করে বললেন, হে ভগবান! আমার গতি কি হবে? হে নারায়ণ! আপনি আমার প্রতি প্রসন্ন হোন! এই বলে কাঁদতে শুরু করেন। এভাবে তিনি ক্ষুধা ও নিদ্রাহীনতায় একাদশী রাত কাটান। নারায়ণ সেই পাপী লুম্পকের রাত্রি জাগরন ও ফল হাতে নিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করাকে পূজা বলে গ্রহণ করলেন। এভাবে নিজের অজান্তেই লুম্পকের সফলা একাদশী ব্রত পালন হয়ে গেল।

সকালে আকাশে দৈববাণী বললেন- হে লুম্পাক, সাফালা একাদশীর পুণ্যের কারণে তুমি রাজত্ব লাভ করবে। সেই বাণী শোনার পর লুম্পাক ঐশ্বরিক রূপ ধারণ করেন এবং তার চরিত্রের সংস্কার হয়।

অতঃপর তার পিতা রাজা মহিষ্মাত লম্পককে সমস্ত রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে তিনি সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেন। তারপর বহু বছর সৎভাবে রাজ্য শাসন করার পর, লুম্পাকও তার পুত্রকে রাজ্যভার বুঝিয়ে দিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। অবশেষে, মৃত্যুর পর লুম্পাক ভগবানের নিকট স্থান পান।

এভাবে যে সফলা একাদশী পালন করে তিনি পার্থিব সুখ ও পরবর্তীতে মুক্তি লাভ করে। যারা এই ব্রতকে সম্মান করে তারাই ধন্য। তাদের জন্ম অর্থবহ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই সফলা একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবণে মানুষ রাজকীয় যজ্ঞের ফল লাভ করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url