গণিতের জনক কে? (উচ্চতর গণিত, বীজ গণিত, পাটি গণিত)

গণিতের জনক কে?
গনিতের জনক বলা হয় আর্কিমিডিস কে।

আর্কিমিডিস আনুমানিক ২৮৭ খৃস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের সিরাকিউজ নামের বন্দর নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধের সময় (২১২ খৃস্টপূর্বাব্দে) মারা যান। বাইজান্টাইন গ্রিক ঐতিহাসিক জন যেতজেসের বিবরণ অনুযায়ী আর্কিমিডিস ৭৫ বছর বয়সে মারা যান, সেখান থেকে তার জন্মসাল সম্পর্কে ধারণা করা হয়। তিনি একজন গ্রিক গণিতবিদ, প্রকৌশলী, পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ এবং দার্শনিক ছিলেন। তাকে প্রাচীন যুগের সেরা ও সর্বাকালের অন্যতম সেরা গণিতবিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও আর্কিমিডিসের জীবনী সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে, তারপরেও আর্কিমিডিসকেই ক্ল্যাসিক্যাল যুগের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর্কিমিডিস তার বাবার নাম ফিডিয়াস বলে উল্লেখ করেছেন "দ্য স্যান্ড রেকোনার" নামক দলিলে এবং তিনি একজন জ্যোতির্বিদ ছিলেন।

রোমান বক্তা সিসেরো সিরাকিউজের এগ্রিজেনটিন গেইটের কাছে ঝোপঝাড় পরিবেষ্টিত অবস্থায় আর্কিমিডিসের কবর আবিষ্কার করেন তার মৃত্যুর ১৩৭ বছর পর ৭৫ খ্রিষ্টাব্দে। তার সমাধিফলকে একটি ভাস্কর্য রয়েছে যা একটি সিলিন্ডার ও ব্যাসের একটি গোলক ও সমান উচ্চতা নিয়ে গঠিত, এবং তা আর্কিমিডিসের অন্যতম আবিষ্কার গুলোর একটিকে নির্দেশ করেছেন।

আর্কিমিডিস মেথড অভ এক্সহশনের মাধ্যমে পাইয়ের আসন্ন মান নির্ণয় করেন, বর্তমানে ইন্টিগ্র্যাল ক্যালকুলাসে ব্যবহৃত অতিক্ষুদ্র সংখ্যার ধারণা ব্যবহার করতে সক্ষম ছিলেন। নিখুঁতভাবে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারতেন প্রুফ অভ কন্ট্রাডিকশন ব্যবহার করে, সেই সব সমাধানের লিমিটও উল্লেখ করতেন। আর্কিমিডিস গণিতে অনেক অবদান রাখলেও তাকে বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য সবচেয়ে বেশি মনে রাখা হয়। 

তিনি লেখার জন্য ডরিক গ্রিক ভাষা ব্যবহার করতেন, যা প্রাচীন কালের সিরাকিউজের আঞ্চলিক ভাষা ছিল। আর্কিমিডিসের বেশিরভাগ কাজ ইউক্লিডের কাজের মত সংরক্ষিত হয়নি, তবে তার সাতটি থীসিসের কথা জানা গেছে তাও অন্যদের কাজের রেফারেন্স থেকে।

গণিতের আবিষ্কারক কে?

গণিতের কোন উদ্ভাবক বা আবিষ্কারক নেই

এরিস্টটলের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব জম্মের প্রায় ২,০০০ বছর আগে প্রাচীন মিশরীর পুরোহিতরা অনুষ্ঠানিকভাবে গণিতের অভিষেক করেন; তবে কে বা করা করেছেন তা জানা সম্বভ হয়নি।

উচ্চতর গণিতের জনক কে?

"জাবির ইবনে হাইয়ান" কে উচ্চতর গনিতের জনক বলা হয়।

জাবির ইবনে হাইয়ান জন্মগ্রহন করেন: ৭২১ খ্রিষ্টাব্দে এবং মৃত্যুবরন করেন: ৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে। পাশ্চাত্য বিশ্বে জাবির ইবনে হাইয়ান "জেবার" নামে পরিচিত ছিলেন। জাবির ইবনে হাইয়ান একাধারে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জ্যোতিষী, রসায়নবিদ ও আলকেমিবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, দার্শনিক, ঔষধ বিশারদ এবং চিকিৎসক ছিলেন। জাবির ইবনে হাইয়ানের প্রকৃত জাতীয়তা সঠিকভাবে জানা যায়নি, অনেকে বলেন তিনি পারস্য, আবার অনেকে বলেন তিনি আরবের নাগরিক ছিলেন।

জাবির ইবনে হাইয়ান রসায়নের জনক হিসেবে ও আখ্যায়িত করা হয়, তিনি আলকেমিতে পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির গোড়াপত্তন করেছিলেন। জাবির ইবনে হাইয়ান রসায়নের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছিলেন সেগুলোর অনেকগুলো এখনও ব্যবহৃত হয়, যেমন: নাইট্রিক ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড সংশ্লেষণ, কেলাসীকরণ এবং পাতন। তার অধিকাংশ আবিষ্কার দুর্বোধ্য এবং সংকেতায়িত, যা বিশেষজ্ঞ ছাড়া কেউ খুব একটা বোঝেন না বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও অনেকে বুঝেন না ঠিক কি সংকেতের মাধ্যমে লিখেছিলেন। 

লোহার মরিচা রোধক বার্নিস আবিষ্কার করেছিলেন জাবির ইবনে হাইয়ান, তাছাড়া ও তরলীকরন, ধাতুর শোধন, বাষ্পীকরন এবং তার আবিষ্কার করেছিলেন। লেখার কালি, কাচ, চুলের কলব তৈরীর প্রক্রিয়া ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছিলেন। এমনকি প্রথম ইস্পাত তৈরী করার পদ্ধতি বের করেছেন জাবির ইবনে হাইয়ান।

বীজ গণিতের জনক কে?

বীজ গনিতের জনক মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল - খারেজমি। বীজগণিতের অপর নাম "অ্যালজেবরা"।

সোভিয়েত রাশিয়ার আরব সাগরে পতিত আমু দরিয়া নদীর একটি দ্বীপের নিকটে অবস্থিত খোয়ারিজম নামক শহরে আনুমানিক ৭৮০ খ্রীষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন এবং খলিফা আল মামুনের মৃত্যুর ১৪ বছর পর আনুমানিক ৮৫০ খ্রীষ্টাব্দে মৃত্যুবরন করেন। 

আল খারেজমি খলিফা আল মামুনের বায়তুল হিকমাহ সংলগ্ন গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারিকের কাজ করতেন। মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল - খারেজমি বীজগণিত, পাটিগণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং ভূগোলে অবদান রাখেন। তবে বীজগণিতের জন্যই মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল - খারেজমি বেশি আলোচিত হন, তার জন্যই তাকে বীজগণিতের জনক বলা হয়।ইসলামী সভ্যতায় সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান হল বীজগণিত, মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল - খারেজমি বীজগণিতকে প্রথম গণিতশাস্ত্রের মধ্যে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলে এবং সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

পাটি গণিতের জনক কে?

আর্যভট্ট কে পাটি গণিতের জনক বলা হয়।

শূন্যের জনক কে?

আর্যভট্টকে শূন্যের (০) জনক বলা হয়।
অশ্মকা নামের একটি জায়গায় ৪৭৬ খ্রিস্টপূর্বে আর্যভট্টের জন্ম হয়েছিল। হিন্দু ঐতিহ্যে ও প্রাচীন বৌদ্ধরা, এই স্থানটিকে উত্তর মহারাষ্ট্র এবং দক্ষিণ গুজরাটের আশেপাশে গোদাবরী ও নর্মদা নদীর মধ্যবর্তী স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেন। আর্যভট্ট ৫৫০ খ্রিস্টপূর্বে মৃত্যুবরন করেন। আর্যভট্টের প্রকৃত জন্মস্থান সম্পর্কে না জানা গেলেও, উচ্চশিক্ষার জন্য কুসুমপুরায় বসবাস করতেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্যভট্ট উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, শিক্ষাশেষে আর্যভট্ট সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং প্রধান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।

প্রাচীন ভারতীয় গণিতের ইতিহাসে ক্লাসিকাল যুগ (স্বর্ণযুগ) আর্যভট্টের হাত ধরেই শুরু হয়। আর্যভট্টের জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিত সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ দুটি গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মাঝে একটি "আর্যভট্টীয়" এটি রচিত ৪ খণ্ডে, মোট ১১৮টি স্তোত্রে। এবং অন্য আর একটি কাজ সম্পর্কে জানা যায় সেটি হল "আর্য-সিদ্ধান্ত" আর্য-সিদ্ধান্তের কোন পাণ্ডুলিপি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি, তবে ব্রহ্মগুপ্ত, বরাহমিহির ও প্রথম ভাস্করের কাজে এটির উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি পদবাচ্যের আকারে গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাকে শূন্যের (০) আবিষ্কারকের মর্যাদা দেয়া হয় এবং তার নামে, ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নাম 'আর্যভট্ট' রাখা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url