ডিপ্লোমা কী? - What is a Diploma?

ডিপ্লোমা কী? - What is a Diploma?
ডিপ্লোমা একটি পেশাগত শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতিপত্র। ডিপ্লোমা কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট পেশায় কাজ করার উপযোগি করে তোলা হয় অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট পেশায় দক্ষ করে তোলা হয়।  যেমন ইজ্ঞিনিয়ারিং, কৃষি, মেরিন ইত্যাদি শাখার ডিপ্লোমা করলে ঐ শাখা সংশ্লিষ্ট পেশায় দক্ষ জনশক্তি হওয়া যায়। অর্থাৎ ডিপ্লোমা কোর্সগুলো একটি নির্দিষ্ট পেশাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট পেশায় শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে পাঠদান করে দেশের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

ইজ্ঞিনিয়ারিং, মেরিন, নার্সিং ইত্যাদি সেক্টরের মধ্য থেকে আপনি যে সাবজেক্ট বা টেকনলজি বা ডিপার্টমেন্ট বেছে নিবেন, সেই ডিপ্লোমা সাবজেক্টের উপর আপনাকে থিউরি পাঠদানের পাশাপাশি প্রাকটিক্যাল ক্লাসের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হবে।

ডিপ্লোমা কোর্স করার সময় একজন শিক্ষার্থী তার নির্বাচিত কোর্সের উপর যথাযথভাবে প্রাকটিক্যাল ক্লাসের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে ওঠে। এজন্য ভর্তির আগে বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছে খোজ নেবেন প্রতিষ্ঠানটিতে প্রাকটিক্যাল ক্লাস কেমন হয়। কেননা অনেক বেসরকারি কলেজের পাশাপাশি কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানেও ঠিকভাবে প্রাকটিক্যাল ক্লাস নেয়না। ডিপ্লোমা কোর্সগুলোর সিলেবাস এবং পাঠ্যক্রম এমনভাবে সাজানো হয় যাতে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট কোর্সে ব্যবহারিক জ্ঞান লাভ করতে পারে। কেননা প্রাকটিক্যাল বা ব্যাবহারিক জ্ঞান ছাড়া পেশাগত দক্ষতা অর্জন সম্ভব নয়।

ডিপ্লোমা কোর্স বাংলাদেশে মূলত দুইটি বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়।

১। কারিগরি বোর্ড: কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরিচালিত ডিপ্লোমা কোর্সগুলো ৪ বছর মেয়াদি এবং আট সেমিষ্টার ভিত্তিক হয়ে থাকে। ভর্তি যোগ্যতা নূন্যতম জিপি.এ ২.৫০ পেয়ে এস.এস.সি পাশ হতে হবে।

২। বাংলাদেশ নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফেরি কাউন্সিল: এর অধীনে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফেরি এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফেরি কোর্স পরিচালিত হয়। ভর্তি যোগ্যতা নূন্যতম এইচ.এস.সি পাশ হতে হবে।

বি:দ্র: বর্তমানে সকল ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীরা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ১০ম গ্রেড প্রাপ্ত হন।

ডিপ্লোমা কোর্স করার লাভ

ডিপ্লোমা কোর্স করার লাভ কি? কেন ডিপ্লোমা কোর্স করবেন? এ সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
  • প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ইচ্ছা থাকে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়া। কিন্তু বাস্তবে পারিবারিকভাবে আর্থিক সাপোর্ট না থাকলে ইন্টার পাশ করে মেডিক্যাল কিংবা ইজ্ঞিনিয়ারিং ভর্তি যুদ্ধে অংশ নেয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইজ্ঞিনিয়ারিং হতে পারে আপনার সপ্ন পূরণের পথ।
  • ডিপ্লোমা কোর্সগুলোর মধ্যে অনেকগুলো কোর্স রয়েছে যেমন- ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, সিভিল, নার্সিং, এই কোর্সগুলোতে সরকারি চাকরির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যারা ক্লাস বা একাডেমিক পড়ালেখা ঠিকভাবে করে থাকে তারা ডিপ্লোমা পাশ করার ১ থেকে ২ বছরের মধ্যেই সরকারি ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড) হতে পারবেন সহজেই।
  • সরকারি চাকরির ক্ষেতে ডিপ্লোমা ইজ্ঞিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থীরা বি.এস.সি ইজ্ঞিনিয়ারদের পরের গ্রেডে নিয়োগ পেয়ে থাকেন, তাই একটু ভালভাবে পড়ালেখা করলে অল্প বয়সেই ভাল পজিশনে যাওয়া সম্ভব।
  • বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বর্তমানে ডিপ্লোমা ইজ্ঞিনিয়ারদের অনেক ভাল পজিশনে যাওয়া সম্ভব। কেননা সার্টিফিকেট এর চেয়ে অভিজ্ঞতার মূল্য বেসরকারি চাকরিতে বেশি। মামা খালু না থাকলে অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। তাই ডিপ্লোমা পাশ করার পর নিজ ডিপার্টমেন্ট রেলাটেড যেকোনো চাকরিতে প্রবেশের ২/৩ বছরেই অনেক ভাল বেতনে, ভালো পজিশনে উঠা সম্ভব। আর চাকরির পাশাপাশি বি.এস.সি ইজ্ঞিনিয়ারিং পড়লেতো কথাই নেই, অভিজ্ঞতা + বি.এস.সি এর মাধ্যমে সহজেই ভাল বেতন ও পদবির চাকরি পাওয়া সম্ভব।

ডিপ্লোমা কমপ্লিট করার পর চাকরি পাওয়া যাবে কি?

৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কমপ্লিট করার পর চাকরি পাওয়া যাবে, তবে কিছু ডিপার্টমেন্ট আছে যেগুলো থেকে পাশ করার পর চাকরি পাওয়া অনেকটা কষ্টকর হয়ে যায়। তাই জেনে বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাল মানের ডিপ্লোমা কোর্সে পড়লে সহজেই চাকরি পাওয়া যাবে। বেসরকারি চাকরির জন্য একাডেমিক ক্লাসের সময় ভালভাবে ব্যাবহারিক ক্লাসগুলো করে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে, কারণ বাস্তব কাজের দক্ষতা না থাকলে বেসরকারি সেক্টরে চাকরি পাবেননা। অন্যদিকে সরকারি চাকরি পাবার জন্য নিজ ডিপার্টমেন্ট রেলাটেড বইগুলো ভালভাবে আয়ত্ত করতে হবে, নতুবা পড়ালেখা শেষে সরকারি চাকরি প্রস্তুতি নিতে গেলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে।

ডিগ্রি ও ডিপ্লোমার মধ্যে পার্থক্য

  • এইচ.এস.সি পাশের পর ডিগ্রী কোর্সে ভর্তি হতে হয় কিন্তু ডিপ্লোমা কোর্সে এস.এস.সি পাশের পর ভর্তি হওয়া যায় (ব্যাতীক্রম ডিপ্লোমা ইন নার্সিং/ মিডওয়াইফারি কোর্সে ভর্তি হতে এইচ.এস.সি পাশ করতে হয়)।
  • সকল ডিগ্রি কোর্স ৩ বছর কিন্তু ডিপ্লোমা কোর্স ৪ বছরের হয়ে থাকে (ব্যাতীক্রম ডিপ্লোমা নার্সিং ৩ বছর)।
  • ডিগ্রি কোর্স বছর ভিত্তিতে পাঠদান এবং পরীক্ষা হয় কিন্তু ডিপ্লোমাতে সেমিস্টার ভিত্তিতে ক্লাস এবং পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় (মোট আট সেমিস্টার)
  •  ডিগ্রি কোর্স করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জ্ঞান বা সুযোগ সৃষ্টি হয়না অপরদিকে, ডিপ্লোমাধারীগণ সহজেই আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশে ডিপ্লোমা কোর্স সমূহ

বাংলাদেশে বর্তমান ডিপ্লোমা কোর্স সমূহ নিচে দেয়া হয়েছে:
১। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং
২। ডিপ্লোমা ইন মেরিন
৩। ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল
৪। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং
৫। ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার
৬। ডিপ্লোমা প্যারামেডিকেল
৭। ডিপ্লোমা ইন প্যাথলজি
৮। ডিপ্লোমা আর্কিটেকচার
৯। ডিপ্লোমা ফাইন আর্টস

প্রশ্ন - FAQ

প্রশ্ন: ডিপ্লোমা করে বিএসসি করতে কত বছর লাগে?
উত্তর: ডিপ্লোমা করে ডুয়েট থেকে বিএসসি করতে ৩ বছর সময় লাগে। বেশ কিছু প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে করতে ৩ বছর এবং কিছু ভার্সিটিতে ৪ বছর লাগে।

প্রশ্ন: ডিপ্লোমা কোর্স কত বছর?
উত্তর: ডিপ্লোমা কোর্স ৪ বছর।

প্রশ্ন: ডিগ্রি কোর্স কত বছর?
উত্তর: ডিগ্রি কোর্স ৩ বছর।

প্রশ্ন: ডিপ্লোমা কি কি বিষয় আছে
উত্তর: ডিপ্লোমাতে অনেকগুলো বিষয় আছে বিস্তারিত পড়ুন ডিপ্লোমা কোর্স সমূহ

প্রশ্ন: ডিপ্লোমা কি স্নাতক?
উত্তর: ডিপ্লোমা স্নাতক না।

আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানান। আমরা দ্রুত আপনার প্রশ্নের উত্তর জানিয়ে দেব।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url