আমার প্রিয় পিঠা অনুচ্ছেদ (৩টি)

আমার প্রিয় পিঠা অনুচ্ছেদ

আমার প্রিয় ভাপা পিঠা

ভাপা পিঠা একটি বিশেষ ধরনের বাঙালি পিঠা যা শীতকালে খাওয়া হয়। এটি সাধারণত চালের গুঁড়া, নারকেল, এবং খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি করা হয়। ভাপা পিঠার স্বাদ এবং গন্ধ একেবারে অনন্য। শীতের সকালে গরম গরম ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। ভাপা পিঠা তৈরির প্রক্রিয়া বেশ সহজ হলেও এতে সময় এবং যত্নের প্রয়োজন। প্রথমে চালের গুঁড়া ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর নারকেল কুরিয়ে খেজুরের গুড়ের সাথে মিশিয়ে নেওয়া হয়। এই মিশ্রণটি চালের গুঁড়ার মধ্যে ভরে ছোট ছোট গোলাকার আকারে তৈরি করা হয়। তারপর এগুলোকে ভাপে সেদ্ধ করা হয়। ভাপা পিঠা সেদ্ধ হওয়ার পর এর উপর দিয়ে আরও একটু গুড় ঢেলে পরিবেশন করা হয়। তাই ভাপা পিঠায় রয়েছে মিষ্টি এবং নারকেলের মিশ্রণ, যা একে আরও সুস্বাদু করে তোলে। শীতকালে সকালে বা বিকেলে চায়ের সাথে ভাপা পিঠা খাওয়া একটি সাধারণ দৃশ্য। এটি শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিতেও ভরপুর। নারকেল এবং খেজুরের গুড়ের পুষ্টিগুণ ভাপা পিঠাকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তোলে। আমার শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে ভাপা পিঠার সাথে। শীতের সকালে মা যখন ভাপা পিঠা বানাতেন, সেই গন্ধে ঘুম ভেঙে যেত। পরিবারের সবাই মিলে একসাথে বসে পিঠা খাওয়ার আনন্দ ছিল অন্যরকম। এখনো শীতকাল এলেই সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায় এবং ভাপা পিঠার স্বাদ নিতে ইচ্ছে করে। ভাপা পিঠা শুধু একটি খাবার নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অংশ। এটি আমাদের শিকড়ের সাথে আমাদের সংযোগ করিয়ে দেয় এবং আমাদের ঐতিহ্যকে জীবিত রাখে। তাই, ভাপা পিঠা আমার প্রিয় পিঠা এবং এটি আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


আমার প্রিয় তালের পিঠা

তালের পিঠা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি মিষ্টান্ন, যা বিশেষ করে ভাদ্র মাসে তালের মৌসুমে তৈরি করা হয়। তালের পিঠার স্বাদ ও ঘ্রাণ আমাকে শৈশবের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। পাকা তালের মণ্ড, চালের গুঁড়া, চিনি, নারকেল, এবং সামান্য লবণ মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই পিঠা। প্রথমে তালের রস বের করে ছেঁকে নেওয়া হয়, যাতে কোনো আঁশ না থাকে। এরপর তালের রসের সঙ্গে চালের গুঁড়া, চিনি, এবং নারকেল মিশিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখা হয়। কাঁঠালপাতা বা কলাপাতায় মিশ্রণটি রেখে স্টিম করে তৈরি করা হয় এই পিঠা। তালের পিঠার মিষ্টি স্বাদ ও নরম টেক্সচার একে অনন্য করে তোলে। বিশেষ করে, পিঠার উপরে নারকেলের টুকরা দেওয়া হলে এর স্বাদ আরও বেড়ে যায়। তালের পিঠা শুধু স্বাদের জন্য নয়, এর পুষ্টিগুণের জন্যও জনপ্রিয়। তাল একটি পুষ্টিকর ফল, যা ভিটামিন এ, সি, এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। তালের পিঠা খেলে শরীরে শক্তি আসে এবং এটি হজমেও সহায়ক। আমার মা যখন তালের পিঠা তৈরি করেন, পুরো বাড়ি মিষ্টি ঘ্রাণে ভরে যায়। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বসে পিঠা খাওয়ার আনন্দই আলাদা। বিশেষ করে, শীতের সকালে গরম গরম তালের পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। তালের পিঠা তৈরির প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য এটি সবসময়ই প্রিয়। আমার মা যখন পিঠা তৈরি করেন, আমি সবসময় তার পাশে বসে থাকি এবং সাহায্য করি। পিঠা তৈরির সময় মায়ের সঙ্গে গল্প করা এবং পিঠার মিষ্টি স্বাদ উপভোগ করা আমার জীবনের অন্যতম প্রিয় স্মৃতি। তালের পিঠা শুধু একটি মিষ্টান্ন নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এটি আমাদের শিকড়ের সঙ্গে আমাদের সংযোগ করিয়ে দেয় এবং আমাদের ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তালের পিঠা আমার প্রিয় কারণ এটি শুধু স্বাদে নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি ও আবেগ। এটি আমার শৈশবের স্মৃতি, পরিবারের সঙ্গে কাটানো সময়, এবং আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। তাই, তালের পিঠা সবসময়ই আমার প্রিয় মিষ্টান্ন হিসেবে থাকবে।


আমার প্রিয় নকশি পিঠা 

নকশি পিঠা বাঙালি ঐতিহ্যের একটি অমূল্য রত্ন। এই পিঠা তৈরির প্রক্রিয়া যেমন জটিল, তেমনি এর স্বাদও অতুলনীয়। নকশি পিঠা তৈরির জন্য প্রথমে আতপ চালের গুঁড়া সেদ্ধ করে কাই বা মন্ড তৈরি করা হয়। এরপর সেই কাই থেকে ছোট ছোট রুটি বানিয়ে তার উপর গাছ, লতা-পাতা ইত্যাদির নকশা তোলা হয়। এই নকশাগুলি পিঠাকে দেয় এক অনন্য সৌন্দর্য। নকশি পিঠার বিভিন্ন নাম রয়েছে, যেমন শঙ্খলতা, কাজললতা, চিরল বা চিরনপাতা, হিজলপাতা, সজনেপাতা, উড়িয়াফুল, বেঁট বা ভ্যাট ফুল, পদ্মদীঘি, সাগরদীঘি, সরপুস, চম্পাবরণ, কন্যামুখ, জামাইমুখ, জামাইমুচড়া, সতীনমুচড়া ইত্যাদি। নকশি পিঠা তৈরির সময় পরিবারের সবাই মিলে একত্রে কাজ করে, যা পারিবারিক বন্ধনকে আরও মজবুত করে। পিঠার নকশা তৈরির জন্য খেঁজুর কাঁটা, ছাঁচ, টিনের পাত ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। পিঠার নকশা করার সময় সবার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ ও উত্তেজনা কাজ করে। পিঠা তৈরির পর তা ভেজে বা ভাপে রান্না করা হয় এবং শেষে গুড় বা চিনির শিরায় ডুবিয়ে পরিবেশন করা হয়। এই পিঠার স্বাদ যেমন মিষ্টি, তেমনি এর নকশাও মনোমুগ্ধকর। নকশি পিঠা শুধু একটি খাবার নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের সৃজনশীলতা ও শিল্পকর্মের প্রতীক। নকশি পিঠা তৈরির মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করি এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দিই। এই পিঠা খাওয়ার সময় মনে হয় যেন আমরা আমাদের শিকড়ের সাথে পুনরায় সংযুক্ত হচ্ছি। তাই, আমার প্রিয় নকশি পিঠা শুধু একটি মিষ্টি খাবার নয়, এটি আমার শৈশবের স্মৃতি, পরিবারের সাথে কাটানো সময় এবং আমাদের সংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
Advertisement