গ্রাম ও শহরের পার্থক্য এবং বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের সংস্কৃতি
গ্রাম ও শহরের পার্থক্য রয়েছে অনেক যা বলে শেষ করা যাবে না, শহরে অনেক প্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে যা গ্রামে পাওয়া যায় না। এখনো এমন অনেক গ্রাম আছে, যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি, এমনকি ভালো মানের দোকান বা দৈনিক হাট বাজারও পাওয়া যায় না। সবচেয়ে বড় কথা হলো গ্রামে এখনো যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়নি। কিন্তু শহরে অনেক হসপিটাল রয়েছে তাছাড়া যাতায়াতেও সুবিধা। দিন রাত ২৪ ঘন্টা গাড়ি পাওয়া যায় শহরে। তবে গ্রামের নির্মল ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশ সত্যিই আসাধারণ,যা শহরে আশা করাটা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
গ্রাম ও শহরের পার্থক্য
জনসংখ্যার পরিমাপ, আকার, কাঠামো ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হয়। জীবনযাত্রার মানের কথাই বলেন আর প্রযুক্তিগত সুবিধার কথা বলেন, অবশ্যই অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। নিচে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য তুলে ধরা হল:
- জনবসতির ছোট্ট গোষ্ঠীকে গ্রাম বলা হয়। অপরদিকে জনবসতির বৃহৎ গোষ্ঠীকে শহর বোঝায়।
- গ্রামের ঘরবাড়িগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। কিন্তু শহরের দালানগুলো একটি অপরটির কাছাকাছি থাকে এবং আবদ্ধ থাকে (এক কথায় ঘিঞ্জি থাকে)।
- মূলত গ্রামগুলোতে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা থাকে। অন্যদিকে পৌরসভা ব্যাবস্থা থাকে শহরে।
- গ্রামে বাড়ি ও মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। কিন্তু শহরে বাড়ি ও মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে।
- গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা খুবি খারাপ থাকে। শহরের যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক উন্নত থাকে।
- গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজ করে জীবন নির্বাহ করে। শহরে বেশিরভাগ মানুষ চাকরী করে থাকে।
- গ্রামের মানুষ কোলাহল মুক্ত প্রাকৃতিকভাবে জীবন যাপন করেন। শহরের মানুষ কোলাহলযুক্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে জীবন যাপন করেন।
- গ্রামের মানুষ আসুস্থ হলে মাইলের পর মাইল পারি দিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। অন্যদিকে শহর তার বিপরীত।
- গ্রামে সব সময় সব কিছু পাওয়া যায় না। কিন্তু শহরে সব কিছু খুব সহজেই পাওয়া যায়।
- গ্রামের মানুষ যৌথ পরিবারে বসবাস করে। অন্যদিকে শহরের মানুষ একক পরিবারে বসবাস করে।
- গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবি কম এবং অনুন্নত। অন্যদিকে শহরে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান মানসম্মত।
- গ্রামের সব মানুষ একে অপরের বিপদে ঝাপিয়ে পরে সাহায্য করতে। আর শহরের একি বিল্ডিং থাকে কিন্তু কেউ কারো পরিচয় ও জানেনা।
বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের সংস্কৃতি
বাংলাদেশ অধিকাংশ মানুষ কৃষিকে কেন্দ্র করে গ্রামে বসবাস করে। কৃষকরা যেখানে বসবাস করে বা যেখানে কৃষি উৎপান্ন হয় সেখান কার জায়গাকে গ্রাম বলা হয়। গ্রামের মানুষ যে সকল সংস্কৃতি লালন-পালন করে আসছেন তাকেই গ্রামের সংস্কৃতি বলা হয়। আর শহরের মানুষজনের পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ, কথাবার্তা, রীতিনীতি সব কিছু মিলেই শহরের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। দেশ, কাল, পাত্রভেদে সংস্কৃতির পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, মানুষ যা কিছু করে তাই তার সংস্কৃতি। গ্রামের সংস্কৃতির সাথে শহরের সংস্কৃতির অনেক পার্থক্য রয়েছে। গ্রাম অঞ্চলের মানুষ শহরের মানুষের থেকে অনেক সহজ-সরল হয়। গ্রামের মানুষের জীবনব্যবস্থা, আচার-আচরণ শহরের মানুষের থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
- গ্রামের মানুষ ধর্মীয় উৎসবগুলো তাদের নিজস্ব রীতিনীতি বা সংস্কৃতি মেনে পালন করে থাকেন। শহরের মানুষ বিভিন্ন সিনেমা, কনসার্ট, টিভি, থিয়েটার ইত্যাদি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
- গ্রামের মানুষ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলো মন দিয়ে শ্রদ্ধার সাথে পালন করে। শহরের মানুষ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলো কেবল মাত্র অনুষ্ঠান ভিত্তিক পালন করে থাকে।
- গ্রামের নারীরা ঐতিহ্যগতভাবে শাড়ি পড়তে পছন্দ করেন এবং কমবয়সি বা আবিবাহিত মেয়েরা সালোয়ার কামিজ পড়তে পছন্দ করেন। অন্যদিকে শহরের নারীরা জিন্স-কামিজ, শার্ট-প্যান্ট বা জিন্স-ফতুয়া পরে থাকেন।
- এক কথায় বললে "গ্রামের সংস্কৃতি" হচ্ছে গ্রামের পুরানো "ঐতিহ্য" রক্ষা করা। অপরদিকে, "শহরের সংস্কৃতি" হচ্ছে নিত্যনতুন ঐতিহ্য সৃষ্টি করা।
গ্রাম ভালো না শহর ভালো
মানুষ গ্রামের চেয়ে শহরকে পছন্দ করে বেশি কারণ গোছানো জিনিস সকলেরই পছন্দ। শহরের পাকা বাড়ি, পাকা রাস্তা, শপিংমল, কফি শপ, পার্ক প্রভৃতি সমস্ত শহর জুরে পাওয়া যায়। আর এই সব লোভনীয় জিনিসের প্রতি কম বেশি সকলের আকর্ষণ থাকে। সেই আকর্ষণ থেকেই মানুষ শহরকে বেশি ভালো মনে করেন।
প্রকৃতপক্ষে, গ্রামের থেকে সুন্দর ও দূষণমুক্ত পরিবেশ শহরের কোথায়ও পাওয়া যাবে না। শিল্পীরা ছবি আঁকার জন্য এবং কবিরা তাদের লেখা-লেখিতে শহরের থেকে গ্রামের কথা বেশি প্রকাশ করেছেন। এমনকি এখনো পরিচালকরা সিনেমা করার জন্য গ্রামকেই বেছে নেন।