ব্রি ধান ৯৬ এর বৈশিষ্ট্য ও চাষ পদ্ধতি

ব্রি ধান ৯৬ এর বৈশিষ্ট্য

বোরো মৌসুমে সেচ নির্ভর চাষাবাদের জন্য ২০২০ সালে ব্রি ধান ৯৬ অনুমোদন পায়। ব্রি ধান ৯৬ এর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন। এই জাতটি গড়ে ৭ টন (হেক্টর প্রতি) পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। তবে, সঠিক পরিচর্যা ও চাষ পদ্ধতি ঠিক থাকলে হেক্টর প্রতি ৮.৬ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে।

ব্রি ধান ৯৬ এর বৈশিষ্ট্য

  1. এই জাতের পূর্ণ বয়স্ক ধান গাছের গড় উচ্চতা ৮৭ সে.মি.।
  2. এই ধানের ডিগ পাতা খাড়া থাকে।
  3. ধানের গাছ খাটো এবং গোড়া শক্ত হয়, যেকারণে ঢলে পড়েনা।
  4. ধানের দানা মাঝারি খাটো আকৃতির এবং পাকা দানার রং সোনালী।
  5. রান্না করার পরে, ভাত ১.৬ গুন লম্বা হয়।
  6. ভাত ঝরঝরা থাকে এবং খেতেও খুব সুস্বাদু।
  7. ১,০০০টি পুষ্ট শস্যের (ধানের) ওজন হয় প্রায় ১৮.৪ গ্রাম।
  8. চালে প্রোটিন ১০.৮% এবং অ্যামাইলোজ ২৮%।

ব্রি ধান ৯৬ চাষ পদ্ধতি

  1. বীজতলায় বীজ বপন: ব্রি ধান ৯৬ এর বীজ বপন করার উপযুক্ত সময় হলো ১ থেকে ২৩ অগ্রহায়ন (১৫ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত।
  2. চারা রোপন: চারা রোপন করার উপযুক্ত সময় ১১ অগ্রহায়ন থেকে ০২ মাঘ (২৫শে ডিসেম্বর থেকে ১৫ই জানুয়ারী) পর্যন্ত।
  3. চারার বয়স: ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে রোপন করতে হবে।
  4. রোপণ দূরত্ব: ২৫ × ১৫ সে.মি. দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
  5. চারার সংখ্যা: প্রতিটি গোছায় ২ থেকে ৩ টি করে রোপণ করতে হবে।
  6. সার ব্যবস্থাপনা: অন্যান্য উচ্চফলনশীল জাতের মতই সার ব্যবহার করতে হবে।
    • ইউরিয়া- ৩৫ থেকে ৪০ কেজি (বিঘা প্রতি),
    • টিএসপি- ১২ থেকে ১৪ কেজি (বিঘা প্রতি),
    • এমওপি- ১৫ থেকে ২০ কেজি (বিঘা প্রতি),
    • জিপসাম- ১২ থেকে ২० কেজি (বিঘা প্রতি) এবং
    • দস্তা বা জিংক সালফেট- ১ থেকে ১.৫ কেজি (বিঘা প্রতি)।
    • জমি চাষের সর্বশেষ পর্যায়ে সবটুকু টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট এবং অর্ধেক এমপি প্রয়োগ করতে হবে।
    • ইউরিয়া তিন কিস্তিতে সমান ভাগে প্রয়োগ করতে হবে। যথা, ১ম কিস্তি রোপনের ১০ থেকে ১২ দিন পর, ২য় কিস্তি ২৫ থেকে ৩০ দিন পর এবং ৩য় কিস্তি বা শেষ কিস্তি ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর।
    • বাকী অর্ধেক এমওপি "ইউরিয়ার" সাথে তৃতীয় কিস্তির দিতে হবে।
  7. আগাছা দমন: জমিতে চারা রোপণ করার পর ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর্যাপ্ত আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
  8. সেচ ব্যবস্থাপনা: ধানের গাছে থোড় আশা থেকে দুধ আশা পর্যন্ত জমিতে পর্যাপ্ত রস বা পানি রাখতে হবে। তবে, এডাব্লিউডি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারলে বেশি ভালো হয়।
  9. পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন: এই জাতের ধান গাছে পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়। তবে, পোকামাকড় বা রোগবালাইয়ের আক্রমণ দেখা দিলে সাথে সাথে বালাইনাশক (অনুমোদিত) প্রয়োগ করতে হবে।
  10. ধান কাটার সময়: ধান কাটার সঠিক সময় হলো ২৩শে চৈত্র থেকে ৭ই বৈশাখ (৭ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল) প্রর্যান্ত।
No Comment
Add Comment
comment url