ব্রি ধান ৮৯ এর বৈশিষ্ট্য ও চাষ পদ্ধতি

ব্রি ধান ৮৯ বোরো মৌসুমের একটি উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধান, যা ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়েছে। ব্রি ধান ৮৯ এর জীবনকাল ১৫৪ থেকে ১৫৮ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। উচ্চ ফলন এবং ব্রি ধান ২৯ এর তুলনায় কম জীবনকালের কারণে যেসব এলাকায় ব্রি ধান ২৯ এর চাষ হয় সেসব এলাকায় খুব সহজেই ব্রি ধান ৮৯ চাষ করা যাবে। ব্রি ধান ৮৯ গড়ে প্রতি হেক্টরে ৮.০ টন ফলন হয়ে থাকে, তবে সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হলে সর্বোচ্চ ৯.৭ টন (হেক্টর প্রতি) পর্যন্ত ফলন হয়।
ব্রি ধান ৮৯ এর বৈশিষ্ট্য
- একটি পূর্ণ বয়স্ক ব্রি ধান ৮৯ ধান গাছের গড় উচ্চতা ১০৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়।
- ব্রি ধান ২৯ এর থেকে ব্রি ধান ৮৯ এর জীবনকাল ৩ - ৫ দিন কম।
- গাছের পাতা হালকা সবুজ।
- এই জাতের ডিগ পাতা লম্বা, খাড়া এবং চওড়া হয়।
- গাছের কান্ডের রং সবুজ এবং অনেক শক্ত হয়ে থাকে।
- ধানের ছড়াগুলো লম্বা লম্বা হয়, ধান পাকার সময়ও গাছের পাতা ও কাণ্ড সবুজ থাকে।
- এই জাতের ধানের ছড়া বা শিষের গোড়ার ধানও পরিপুষ্ট হয়।
- সাধারণত এই জাতের ধানের দানাগুলো অনেকটা ব্রি ধান ২৯ এর মতোই, তবে ২৯ এর থেকে সামান্য চিকন।
- এই জাতের চাল রান্না করার পরে ১.৪ গুণ লম্বা হয় ভাত।
- এই জাতের চালের ভাত যেমন ঝরঝরে থাকে তেমনি খেতে সুস্বাদু।
- ১০০০ টি পরিপুষ্ট ধানের ওজন প্রায় চব্বিশ দশমিক চার (২৪.৪) গ্রাম।
- এই ধানে ২৮.৫% অ্যামাইলোজ থাকে।
ব্রি ধান ৮৯ চাষ পদ্ধতি
- বীজতলায় বীজ বপন: বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৭ কার্তিক থেকে ১ অগ্রহায়ণ (১ই নভেম্বর - ১৫ই নভেম্বর) পর্যন্ত।
- চারা রোপণ: চারা রোপণের সঠিক সময় ১ পৌষ থেকে ৩০ পৌষ (১৫ই ডিসেম্বর - ১৩ই জানুয়ারি) পর্যন্ত।
- চারার বয়স: বীজ বপনের ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে চারা জমিতে রোপন করতে হবে।
- রোপন দূরত্ব: চারা রোপন করার সময় ২০ × ২০ সেন্টিমিটার দুরত্বে বা গ্যাপ দিয়ে রোপন করবেন।
- চারার সংখ্যা: প্রতি গোছায় ২ থেকে ৩টি করে চারা রোপন করতে হবে।
- সার প্রয়োগ: এই ধান চাষে প্রতি বিঘায় কি পরিমান সার ব্যবহার করবেন তা হল-
- ইউরিয়া- ৩৫-৪০ কেজি, এমওপি- ১৫-২০ কেজি, টিএসপি- ১২-১৪ কেজি, জিংক সালফেট- ১-১.৬ কেজি ও জিপসাম- ১২-১৫ কেজি সার লাগবে।
- জমি প্রস্তুত করার সর্বশেষ চাষের সময় ৩ ভাগের ২ এমওপি এবং সমস্ত জিপসাম, টিএসপি ও জিংক সালফেট সার জমিতে সিটিয়ে (প্রয়োগ) দিতে হবে।
- ইউরিয়া সার সমান তিন ভাগ করে দিতে হবে। রোপনের ১৫ থেকে ২০ দিন পর ১ম বার, ২৮ থেকে ৩০ দিন পর ২য় বার এবং ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর ৩য় বার জমিতে সিটিয়ে দিতে হবে।
- বাকী এক ভাগ এমওপি ইউরিয়া ২য় বারের সাথে দিতে হবে।
- আগাছা দমন: চারা রোপন করার পর জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত।
- সেচ ব্যবহার: ধান গাছে থোড় আসা থেকে দুধ আসা পর্যন্ত জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ রসের বা পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে, প্রয়োজন হলে সেচ দিতে হবে।
- রোগবালাই বা পোকামাকড় দমন: প্রচলিত জাতের তুলনায় রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেক কম হয়। যদি রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয় তাহলে অনুমোদিত বালাইনাশক অনুমোদিত পরিমাণে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে দিতে হবে।
- ফসল কাটার সময়: ফসল কাটার সঠিক সময় ৫ বৈশাখ থেকে ২০ বৈশাখ (১৮ই এপ্রিল - ০৩ই মে) পর্যন্ত।