স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী কি? লোগো ডিজাইনার, রচনা, কবিতা

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী
ফটো সোর্স: https://gdc.gov.bd/

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী কি?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত বার্ষিক পরিকল্পনাকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বলা হয়। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।২০২২ সালে তা ৫০ তম বছরে পা দেয়, তাই বাংলাদেশ সরকার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের ঘোষনা দেন।

আভিধানিক ভাষায়, সুবর্ণজয়ন্তী শব্দটি মূলত কোনো ঘটনার ৫০ বছরপূর্তিকে বুঝানো হয়।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী লোগো ডিজাইনার কে?

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর লোগো ডিজাইনার: রামেন্দ্র মজুমদার এবং প্রদীপ চক্রবর্তী।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী কবিতা:

সুবর্ণ জয়ন্তীতে
মোঃ মাহাবুল্লাহ হাসান

আমি বিরহী এক সুবর্ণ আগ্রহী,
চেতনার কথা যেন মনের অশ্রুজলে।

“৫৬” এর বর্গ মাইল তুমি নায়ক বলে,
বঙ্গের রাজা তুমি সুবর্ণের ডাকে কালে।
হয়ে যাবে তোলপাড় থাকবে না ফাঁকে
সংগ্রামে তুমি চেতনার বাংলাদেশ।

জ্বলিত এক উজ্জ্বল প্রদীপের ফল,
যেথায় এই দেশের দূর্ভাগা হয়ে যাবে কাল।

একাত্তরের রক্তঝরা কলরেডীও সাক্ষী।
থাকবেনা কুঁড়েঘরে একাত্তরের সংগ্রামে।
বর্ণের ব্যাসে বনাণীতে “৭১” এর জাতি,
ফিরেছে অর্ধশত সূবর্ণ প্রাপ্তি।

স্বাধীনতার ইতিহাসে “৭১” এ সাড়া,
সংগ্রামে চেতনার এক সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাড়া।
পদ্মার ঢেউয়ে, যমুনার পাড়ে বিস্মৃত হয়ে,
চেয়ে থাকি সংগ্রামের দোড়ে।

বিরহের বার্তা পৌছে যাক ধীরে ধীরে,
আমি বিরহী এক সুবর্ণ আগ্রহী।
শত-শত আন্দলনে রক্তের ক্ষয়,
তবুও বাঙ্গালী বীরের জাতি করে না ভয়।

চেতনার আগ্রহে বেঁচে আছি সবাই,
অমান্য সেই দিনগুলো ফেলে হয়েছে জয়।
জাতি আজ পেয়েছে তাই,
আনন্দে সুবর্ণ জয়ন্তীর জয়।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুচ্ছেদ / রচনা:

ভূমিকা: এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছিল নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মার মূল্যে এবং ৪০ লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম ১৯৭১ সালের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল বিশ্বের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র দেশপ্রেমিকদের। যার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম আমাদের এনে দিয়েছে গৌরবের স্বর্ণ শিখরে।

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস: প্রায় ২ বছর বোনিয়া ইংরেজদের দাসত্ব করেন বাংলাদেশে। ১৯৪৭ সালে মুক্তির পর বাংলাদেশ পাকিস্তানের দুঃশাসনের খপ্পরে পড়ে। ফলস্বরূপ, পুনরায় শোষণে শোষিত হয় পাকিস্তানের হাতে। স্বৈরাচারী শাসকদের বেপরোয়া আচরণে বাঙালি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পশ্চিমা শাসকশ্রেণির সমর্থক যত বেশি সোচ্চার, বাঙালি তত বেশি সোচ্চার হতে থাকে। এর ফলে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৬দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ। পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল বাঙ্গালীর সাথে বেইমানি করে ১৯৬৯-এর নির্বাচনে পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করল ও ক্ষমতা হস্তান্তরে গরীয়সী শুরু করেন। স্বাধীনতা কখনো সহজে আসে না। স্বাধীনতা কাউকে দেওয়া হয় না, কেড়ে নিতে হয়। স্বাধীনতা লাভ করা আমাদের জন্য খুবই কঠিন ছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান" বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তখনই সারাদেশে স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়। জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের নির্দেশে কুষ্টিয়ায় স্বাধীন বাংলার সরকার গঠিত হয় এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মেজর জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, কে এম শফিউল্লাহ মেজর জলিল, কর্নেল তাহের, মেজর রফিকুল ইসলাম, কাদের সিদ্দিকীসহ বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ফলসরূপ স্বাধীন গৌরবের ৫০ বছরের সুবর্ণ জয়ন্তী পেয়েছি।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী: এদেশের জনগণ ২৬ মার্চ থেকে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে এবং ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাহিনীকে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছায়। যে কারনে, আমাদের এই স্বাধীনতা এক পরম বিস্ময়। ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হয়েছিল। স্বাধীনতা এখন পূর্ণ যৌবনে প্রবেশ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বহু মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল মূলত শোষণের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য নয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে সুষম বণ্টন ব্যবস্থায় পরিবর্তন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার, শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন: স্বাধীনতা দিবস প্রতি বছর আমাদের দোরগোড়ায় আসে। কিন্তু সুবর্ণ জয়ন্তী প্রতি বছর আসে না। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় এবং প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি ভবনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপতির জনগণের উদ্দেশে ভাষণ এবং বিশেষ ব্যক্তিদের ভাষণ বিশেষ কর্মসূচি দিয়ে শুরু হয়। এদিনে স্কুল-কলেজে বিশেষ কর্মসূচি, সেনা কুচকাওয়াজ, শহরের স্টেডিয়ামে শিশু সমাবেশ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার বিশেষ প্রার্থনা ছাড়াও সুবর্ণজয়ন্তী শোভাযাত্রা, বিজয় মেলা, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। যথাযোগ্য মর্যাদায় সমগ্র বাংলাদেশে।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের অগ্রযাত্রা: স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী পূর্ণ করার পর অর্থনৈতিক অবকাঠামো থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পর্যন্ত প্রতিটি কাঠামোর উন্নয়নই ছিল স্বাধীনতার ৫০ বছরে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এ দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ এ দেশক সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও উন্নয়নে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। আজ বিশ্বে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও উন্নয়নশীল দেশের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশের নাম সকলেরই জানা। স্বাধীনতার এই সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশের উন্নয়ন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের বুকে। বাংলার স্বপ্নে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রুপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো স্থাপনা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণকারী ৫৭তম দেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ছিল গৌরব ও ইতিহাসে ভরপুর।

উপসংহারঃ ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে আজ আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি। আর স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের সুবর্ণ জয়ন্তী। তাই আমি প্রতিজ্ঞা করছি সব ভেদাভেদ ভুলে দেশপ্রেমে আত্মনিয়োগ করব। তবেই আমাদের স্বাধীনতার এই সুবর্ণ জয়ন্তী সার্থক হবে। তাছাড়া স্বাধীনতার জন্য জাতীয় অগ্রগতি অপরিহার্য। এই সুবর্ণ জয়ন্তীতে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র জাতীয় চেতনায় পুনরুজ্জীবিত হোক এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শ্লোগান বেজে উঠুক এবং দেশবাসীকে জাতি গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করুক। দেশ সফলভাবে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
Advertisement